পদ্মা সেতুর কারণে বদলে যাচ্ছে শিবচর

পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাথে সাথে পদ্মার পাড় মাদারীপুরের শিবচরসহ পদ্মা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে সরকারের গৃহীত নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে এখন সমৃদ্ধির হাতছানি। প্রকল্পগুলোর মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, আবাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পও রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নতুন নতুন হাট বাজার যোগাযোগ ব্যবস্থা শিক্ষা খাত সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগও চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে পদ্মা সেতুকে লক্ষ্য করে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শিবচর যেন পদ্মা পাড়ের এক আধুনিক জনপদের মডেলে রূপ নিচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসনসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, পদ্মা বহুমুখী সেতুর আর মাত্র একটি স্প্যান বাকি রয়েছে। বহুল কাঙ্খিত সেতুটি বাস্তবায়নকে ঘিরে একসময়ের অবহেলিত পদ্মার পার এখন যেন আলোক ঝলমলে চমকিত এক জনপদ।
এই জনপদের ৩ জেলায় দেশের প্রথম ৮ লেনের এক্সপ্রেস হাইওয়ে উদ্বোধন হয়েছে আরো আগেই। শিবচর অংশের এক্সপ্রেস হাইওয়ের পাশে গড়ে উঠেছে নতুন অন্তত ৮-১০ হাট বাজার। এ পথেই রেল লাইন বিস্তৃত হচ্ছে যশোর পর্যন্ত।
শিবচরে ২টি স্টেশন, জাজিরায় ১টি স্টেশনসহ জংশন রয়েছে ভাঙ্গায়। অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে এক্সপ্রেস হাইওয়ে সংলগ্ন শিবচর, ভাঙ্গা ও সদরপুরে আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী এলাকায়।
এরইমধ্যে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে শুরু হয়েছে শিবচরের দত্তপড়ায় ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজে। নির্মাণ প্রক্রীয়াধীন নিজস্ব ক্যাম্পাস।
প্রধানমন্ত্রী ১০৮ একর জায়গায় ১৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী, ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রকল্পর ভিত্তিপ্রস্তর করেছেন এখানে। দাদাভাই হাউজিং প্রকল্প নির্মাণ শেষে এ ১ হাজার ৬৪টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। শিবচরের দ্বিতীয়খণ্ড উদ্বোধন করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম তালুকদার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। একই উপজেলার বহেরাতলায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জায়গা নির্ধারণ করেছে টিটিসি নির্মানের।
৭১নং কেরানীবাটের ৮ একর জায়গায় শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৭৯নং বড়দোয়ালীর ৩ একর জায়গায় নির্মিত হচ্ছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নার্সিং ইনষ্টিটিউট অ্যান্ড কলেজ, ৮১নং বড় বাহাদুরপুরের ৫.২১ একর জায়গায় নির্মিত হচ্ছে ইনষ্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড টেকনোলজি।
পদ্মার পাড়ের ৭৫ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা ইনষ্টিটিউট ফর ফন্ট্রিয়ার টেকনোলজি, ৪০০ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে শিবচর ইউনিয়নে বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনের। ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি ও সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রীয়া শুরু হয়েছে পৌরসভা ও সংলগ্ন এলাকায়।
শেখ রাসেল শিশু পার্ক, উপজেলা মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স, মহাসড়কে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ শুরু হয়েছে। কর্মজীবী মায়েদের জন্য জায়গা নির্ধারণ হয়েছে বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলসহ ট্রেনিং সেন্টার ও ডে কেয়ার সেন্টার।
আধুনিক কাঁচা বাজারসহ শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরুর পথে। নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক চৌধুরী ফাতেমা বেগম, ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ও লিটন চৌধুরী অডিটোরিয়াম, চৌধুরী ফিরোজা বেগম শিল্পকলা একাডেমি ও মুক্তমঞ্চ, ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী সুপার মার্কেট, পৌর বাস স্ট্যান্ড, দশ শয্যা বিশিষ্ট ৩টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, হাইওয়ে থানা।
চিফ হুইপের ব্যক্তিগত অর্থায়নে শিবচরের দত্তপাড়ায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদসহ একাধিক স্থানে নির্মিত হচ্ছে বেশ কয়েকটি মসজিদ। পদ্মা সেতুর চালুর সাথে নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণে শিবচরের বারবারের সংসদ সদস্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর সূদুর প্রসারী চিন্তার মাধ্যমে পদ্মা সেতু সংযুক্ত সকল সড়ক প্রসস্তকরণ,
হাট বাজার উন্নতকরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোসহ পরিকল্পিত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। পদ্মা আড়িয়াল খাঁসহ অসংখ্য নদী খাল বিলে ঘেরা উপজেলাটিতে তিনি নির্মাণ করেছেন ২ শতাধিক প্রসস্থ ব্রিজ কালভার্ট, হাজার কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক,
২ শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল কলেজ মাদরাসা ভবন, ৪টি কলেজকে অনার্স ও ১টি কলেজে মাস্টার্সে উন্নতিকরণ, ৪টি থানা- তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন, মিনি স্টেডিয়াম-গ্যালারি, বিশেষ করে ১১টি ভাস্কর্য মুর্যাল নির্মাণ,
সড়ক ও বিভিন্ন স্কুলের ভবন সমূহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে নানান উদ্যোগ উপজেলাটিকে সারা দেশে উন্নয়নের মডেলে রূপ দিয়েছে। মসজিদ মাদরাসা মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়নও চলছে সমানতালে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান উপরে উল্ল্যেখিত তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পদ্মা সেতুকে ঘিরে পদ্মা পাড়ের এ অঞ্চলসহ দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। সরকারের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে।
অঞ্চলটিকে পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সময়োপযোগী করে তুলতে চিফ হুইপ স্যারের পদক্ষেপগুলো সকল কর্মযজ্ঞকে সহজেই সফল করে তুলছে। তার নিরলস পরিশ্রমের কারণে পদ্মার পাড়ের এ জনপদ খুব অল্প সময়ের মধ্যে সিঙ্গাপুরের আদলে রূপ নেবে।
চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, পদ্মা সেতু সংলগ্ন জনপদ শিবচরকে আমরা ঢাকার পাশের আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। যেখান শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে। এখানে বসবাস করে মানুষ আধুনিক জীবনযাপন করতে পারবে।