চট্টগ্রাম বন্দরে এই করোনার মধ্যেও থেমে নেই চো’রাচালান

করো’না’ভা’ইরাসের মহামা’রির মধ্যে চারিদিকে আত’ঙ্কি’ত সময়ে চো’রা’চালান চক্র ঠিকই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার খুলে পণ্য গায়েব করে নিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সুরক্ষিত এলাকা থেকে কড়া নজরদারির মধ্যে সিলগা’লা খুলে কন্টেইনার থেকে পণ্য পাচার করে নিয়েছে আমদানিকারক ঢাকার কিমস ফ্যাশন ও সিঅ্যান্ডএফ চট্টগ্রামের আর এম অ্যাসোসিয়েটস সাথে একটি চো’রা’চালান চ’ক্র।
কাস্টমস গোয়ন্দা দলের তৎপরতায় আজ রবিবার সেটি ধরা পড়েছে। কাস্টমস বলছে, কিমস ফ্যাশনস এর পণ্যভর্তি চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে নামে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে।
এরপর থেকে চালানটি শু’ল্কছাড়া বন্দর থেকে বের করার জন্য কৌশল খুঁজতে থাকে চো’রা’চালান চক্রটি। মহা’মা’রির সময় কাস্টমসের কাজ যখন সীমিত হয়ে আসে তখনই একটি কৌশল নেয় চ’ক্রটি।
৭৪ দিন ধরে বন্দরে ফেলে রাখার পর গত ১৯ এপ্রিল অন্য একটি চালানের সাথে উক্ত কন্টেইনারে থাকা ২৬ হাজার ৩০০ কেজি কাপড় পাচার করে নেয়া হয়।
জানতে চাইলে চট্টগাম কাস্টমস গোয়েন্দা দলের প্রধান ও সহকারী কমিশনার নূর এ হাসনা সানজিদা অনুসূয়া বলেন, ১৯ এপ্রিল একটি চালান বৈধভাবে বন্দর থেকে বের করার সময় চারটি কাভার্ডভ্যানের সাথে আরো দুটি বাড়তি কাভার্ডভ্যান প্রবেশ করানো হয়। সেই কাভার্ডভ্যানেই এই চালানের পণ্যগুলো অবৈধভাবে পাচার করে নেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় আমরা আমদানিকারক কিমস ফ্যাশন এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আর. এম. অ্যাসোসিয়েটসকে চিহ্নিত করেছি। কত টাকা শু’ল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, তার হিসাব এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
এই ঘটনায় তদন্তপূর্বক রাজস্ব ফাঁ’কি ও চো’রা’চালানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী মা’ম’লা দায়েরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ঢাকা এপোলো হাসপাতালের পাশে অবস্থিত লুক্রেটিভ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ সলিউশন চীন থেকে এক কন্টেইনারে করে ৩০০ গ্রাম ওজনের আর্ট কার্ড আমদানি করে।
এজন্য ঢাকার উত্তরা ব্যাংক থেকে ঋণপত্র খুলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। কালামাতা ট্রেডার্স জাহাজে করে চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছে। চালানটি খালাসের জন্য আমদানিকারকের নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ লাকী প্লাজার আর এম এসোসিয়েটস কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি জমা দিয়ে শুল্ক পরিশোধ করে।
গত ১৯ এপ্রিল চালানটি খালাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করানো হয় মোট চারটি কাভার্ড ভ্যান। এরমধ্যে দুটি কাভার্ড ভ্যান হচ্ছে বাড়তি। সেই বাড়তি দুটি কাভার্ড ভ্যানে করেই অন্য একটি চালানের পণ্যগুলো পাচার করা হয়।
কাস্টমস বলছে, যে চালানটির কাপড় পাচার করা হয়েছে সেই চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল এমসিসি দানাং জাহাজে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘদিন ধরে চালানটির বিপরিতে বিল অব এন্ট্রি জমা না করায় কাস্টমস গোয়েন্দা দলের সনএদহ হয়; সেজন্য তারা কন্টেইনারটি নজরদারিতে রাখে।
মুলত চো’রাচালান চ’ক্র সুযোগ খুঁজছিল শুল্ক ছাড়াই কিভাবে চালানটি পাচার করে বের করে নেয়া যায়। করো’না’ভা’ইরাসের মহা’মা’রির সময় কাস্টমসের কার্যক্রম যখন সীমিত হয়ে পড়ে তখনই মোক্ষম সুযোগটি পেয়ে যায় চো’রাচালান চ’ক্রটি।
১৯ এপ্রিল চালানটি বের করে নেওয়ার সাথে সরাসরি জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আর এম অ্যাসোসিয়েটস। কারণ বাড়তি দুটি কাভার্ড ভাড়া করেছিল সেই প্রতিষ্ঠান। আর সেদিন অনুমোদিত পণ্য চালান খালাসের সিঅ্যান্ডএফও ছিল একই প্রতিষ্ঠান আর এম অ্যাসোসিয়েটস।
এরসাথে বন্দরের কিছু কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারে। কারণ বন্দরে থাকা বাড়তি একটি কন্টেইনার খুঁজে বের করা এবং নামিয়ে আনার কাজটি করে থাকা বন্দরের কর্মীরা।
জানা গেছে, বন্দর থেকে শুল্ক ফাঁ’কি দিয়ে পণ্য নিয়ে যাওয়া দুই কাভার্ড ভ্যানের মধ্যে একটি কাভার্ড ভ্যান নং ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-০৫৬৯ চট্টগ্রাম বন্দর থানায় আটক রয়েছে। ওই কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে ‘বিএল নং- ৫৯১৮৮৫১১৮’-এর বিপরীতে আমদানীকৃত পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর থানায় পাচার হয়ে যাওয়া একটি কাভার্ড ভ্যান আটকের পর বিষয়টি নজরে আসে কাস্টমস গোয়েন্দা দলের। এরপর বন্দর, কাস্টমস, গোয়েন্দা দল প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সেই কন্টেইনার খুঁজে দেখা যায় সেখানে পুরোটাই ফাঁকা।
কাস্টমস কর্মকর্তারা দেখেন, কন্টেইনারটির আসল সীলগালা ভাঙ্গা, পরে নকল একটি সিলগালা লাগানো আছে। কিন্তু কন্টেইনারে ঘোষিত ২৬ হাজার ৩০০ কেজি কাপড়ের এক কেজি পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া মোবাইল নম্বর অনুযায়ী আর. এম. অ্যাসোসিয়েটসের প্রোপ্রাইটর মাহাবুব হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অ’ভি’যোগ পাওয়া গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পাচারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত আর এম অ্যাসোসিয়েটস। কিন্তু এই প্রথম হাতনাতে ধরা পড়লো কাস্টমসের হাতে।
এখন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে যখন দোষীদের বিরু’দ্ধে ব্যবস্থা নিবেন তখন হয়তো দেখা যাবে তদবির করে ঠেকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথবা শেষপর্যন্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় তখন আ’ন্দো’লন ডাকা হবে। এভাবেই চো’রা’চালানীরা প্রশ্রয় পেয়ে যায়।
সুত্রঃ কালের কন্ঠ