খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ‘আদার ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছে না’

খাতুনগঞ্জের পাইকারিতে আদার কমতে কমতে এখন কেজি ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দরে ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছে না আড়তদাররা। অথচ এক সপ্তাহ আগেও আদা নিয়ে চরম হৈ চৈ শুরু হয়েছিল। দাম বাড়তে বাড়তে আড়তে কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
আর খুচরা বাজারে এই দাম উঠেছিল ৩০০ টাকায়। হঠাৎ করে এত দাম বাড়ার পেছনে বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছিল। সেনাবাহিনী দিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছিল জেলা প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেটদের।
ভ্রাম্যমাণ আদালত তখন দাম বেঁধে দিয়েছিল চীনা আদা কেজি ১৫০ টাকা এবং মায়ানমারের আদা ১২০ টাকায়। কিন্তু বাজারে সেই বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে কেজি ৩৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
আদার দাম কমার প্রথম কারণটি হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজজটের কিছুটা উন্নতির ফলে আদার কন্টেইনার দ্রুত ছাড় নিতে পারা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, অস্থিরতার সময় টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর আদা আমদানি হওয়া।
তৃতীয় কারণ হচ্ছে, এক আমদানিকারক প্রশাসনের অনুরোধে ৮১ হাজার কেজি আদা একেবারে ন্যূনতম খরচে কেজি ১৩৫ টাকায় বিক্রি করা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কড়া অ’ভি’যান।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, শুধুমাত্র ভ্রাম্যমাণ আদালতের অ’ভি’যানের কারণে দাম কমেনি। বন্দর থেকে আদার কন্টেইনার দ্রুত ছাড় করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর কারণে দ্রুত ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরফলে অভিযানের সময় দেওয়া দামের চেয়েও কমে আদা বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় কেজি ১৫০ টাকা বিক্রির কথা বলা হয়েছিল। এখন দাম কমতে কমতে ১১৫ টাকায় নেমেছে। বাজারে বিক্রি এত কমে গেছে এই দামে আমরা ক্রেতা মিলছে না। আর চাহিদা থাকবে কেমনে এক পরিবারে মাসে বড়জোর এক কেজি আদা লাগে।
খাতুনগঞ্জের গতকাল দুই দেশের আদা বিক্রি হচ্ছে। চীনের আদার চাহিদা সবচে বেশি কেজি ১১৫ টাকায় আর মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে এসেছে প্রচুর আদা ফলে সেই আদা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
জানতে চাইলে আদার আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের ফরহাদ ট্রেডিংয়ের মালিক নুর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমি সেদিন বিকেলে জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামিয়ে রাতেই ছাড় করে বাজারে সরবরাহ দিয়েছি।
কেজি আমি ১৩৫ টাকা কেজিতে ৮১ হাজার কেজি আদা সরবরাহ দিয়েছি; একেবারে ন্যুনতম লাভে। দেশের এই প্রয়োজনের সময় আমার কাছে থাকলে বাকি সব আদার কন্টেইনারও বাজারে সরবরাহ দিতাম।
তিনি পরামর্শ দেন, বাজারে আমদানি ও সরবরাহ ঠিক রাখতে পারলে দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। এই সরবরাহ চ্যানেলে কোথা ব্যা’ঘাত ঘটলেই দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়।
এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে এসব পণ্যের আমদানি কেমন আর্ন্তজাতিক বাজার দর কেমন তা যাচাই করে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, চারমাস ধরে কেনা দামের চেয়ে লস দিয়ে আদা বিক্রি করতে গিয়ে অনেকেই পুঁজি হারিয়েছেন।
ফলে ব্যাংকগুলো সেই আমদানিকারকদের নতুন করে ঋণপত্র খুলতে সহায়তা দিচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে ঋণপত্র খোলার হার কমবে; ভবিষ্যতে আবারও সং’ক’ট তৈরি হবে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে একনাগাড়ে চারদিন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত সেনাবাহিনী-র্যাব সহায়তায় চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে কঠোর অভিযান পরিচালনা করে এবং অতিরিক্ত মুনাফায় বিক্রি করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের জরিমানা করে।
আদা ব্যবসায়ীদের ঘর থেকে ডেকে এনে জেরা করে। এই অবস্থায় বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে আসল ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েন সবচে বেশি। কিন্তু আদার দাম বাড়ার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত না করে এভাবে ঢালাও অভিযান চালিয়ে বাজারে সুফল মিলবে না বলে মত দিয়েছিলেন এই খাতের বনেদি ও প্রকৃত অনেক ব্যবসায়ী।
এই অবস্থায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান সীমিত করে ফেলেন। একইসাথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বাজারে আদার সরবরাহ বাড়তে শুরু করে। এরপর থেকেই বাজারে দাম কমতে শুরু করে।
আমদানিকারকরা বলছেন, বাজারে তার গতিতে চলতে দিতে হবে। অভিযান শুরুর আগে আগে আমদানি পরিস্থিতি, মূল্য যাচাই করে দেখা উচিত। আর ঢালাও অভিযান না চালিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তা চালানো উচিত। এতে আসল ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হবেন না। তবে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা তদারকির মধ্যে থাকবেন। আর বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
সুত্রঃ কালের কন্ঠ
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন