উন্মোচন হল রহস্য : হ’ত্যার আগে মা ও দুই মে’য়েকে ধ’র্ষণ

দোতলার সেই বাড়ি, সেই বেলকনি, খাট-সোফা, চেয়ার টেবিল, থরে থরে সাজানো বই-পুস্তক কিংবা চারপাশের নিদারুণ নিস্তব্ধতা- সব কিছুই আছে আগের মতো। শুধু নেই স্মৃ’তি ফাতেমা আর তার তিন সন্তান। তালাবদ্ধ বাড়িটির দিকে তাকালেই কা’ন্নায় ভেসে ওঠে মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের সাজানো গোছানো ছোট্ট সেই সুখী সংসারের জীবন যাপনের দৃশ্য।
এ বাড়ির দোতলায় শোবার ঘরে ঢুকে গত বুধবার রাতে দু’র্বৃত্তরা মা ও তার দুই মেয়েকে ধ’র্ষণের পর গ’লা কে’টে হ’ত্যা করে। পুলিশ ধ’র্ষণের আলামত পেয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার এসআই এখলাস ফরাজী। চারপাশের আ’তঙ্কিত মানুষগুলোও বাড়িটির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, আফসোস করছেন।
ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক স্মৃ’তি ফাতেমা ও তার তিন সন্তানকে গ’লা কে’টে নি’র্মমভাবে হ’ত্যার র’হস্য উদ্ঘাটনে হন্যে হয়ে ঘুরছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ এখনও অন্ধকারে। এ হ’ত্যার’হস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। এদিকে তিন সন্তানকে নিয়ে পাশাপাশি কবরে ঘুমিয়ে আছেন স্মৃ’তি ফাতেমা।
গতকাল শনিবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজে’লার জৈনা বাজার এলাকার কলেজ রোডের সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশ এলাকা সুনসান নীরব। বাড়ির দোতলার বেলকনির পশ্চিম দিকে ঝুলছে সাদা কালো লাল নীল রঙের জামাকাপড়, হয়তো এগুলো শুকানোর জন্য রোদে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার তিন দিন পরও কাপড়গুলো সেখানেই আছে।
ত’দন্তের প্রয়োজনে বাড়িটি তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে। মাঝেমধ্যেই পুলিশ এ বাড়িতে আসছে ত’দন্ত কাজে। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ চারজনের লা’শ উ’দ্ধারের পর ম’য়নাত’দন্ত শেষে শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজে’লার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামে পাশাপাশি মা ও তার তিন সন্তানকে দাফন করা হয়। প্রবাসী কাজলের ইচ্ছা অনুযায়ীই তাদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
গত তিন দিনেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নি’র্মম এই হ’ত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। তবে র’হস্যজনক এ হ’ত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে পুলিশ বেশ কয়েকটি বি’ষয়কে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে কাজ করছে। শিগগির র’হস্য উদ্ঘাটন হবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজে’লার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রেজোয়ান হোসেন কাজল দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসী। সেখানেই ইন্দোনেশিয়ার অধিবাসী স্মৃ’তি ফাতেমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে কাজল ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে ফাতেমাকে বিয়ে করে সংসার গড়েন। সাবরিনা সুলতানা নুরা (১৫), নাওরিন হাওয়া (১২) ও ফাদিল নামে (৮) তিন সন্তানের জন্ম হয় তাদের সংসারে।
বড় মেয়ে কলেজে ও ছোট মেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করছিল। ছোট ছেলেটা জন্ম থেকেই বাকপ্রতিব’ন্ধী। দুই যুগেরও বেশি সময় আগে জৈনা বাজার এলাকায় এক খণ্ড জমি কেনেন কাজল। পরবর্তী সময় সেখানে বাড়ি তৈরি করে স্ত্রী-সন্তানকে রেখে কাজল মালয়েশিয়ায় চলে যান। স্ত্রী স্মৃ’তি ফাতেমা সংসার সামলানোর পাশাপাশি তিন সন্তানকে লালন-পালন করছিলেন।
একসঙ্গে চারজনকে হ’ত্যার পর কাজলের বাবা আবুল হোসেন বা’দী হয়ে শ্রীপুর থানায় মা’মলা করেছেন। কারও নাম উল্লেখ না করে অ’জ্ঞাতনামা আ’সামি করে মা’মলাটি করেন। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জে’লা পুলিশের একাধিক টিম এ হ’ত্যার’হস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে। তা ছাড়া পুলিশের বিভিন্ন বিশেষ ইউনিটের দক্ষ ও অভিজ্ঞ সদস্যরাও কাজ করছেন। জে’লা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, খুব শিগগির এ ঘটনার আসল র’হস্য বেরিয়ে আসবে।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন