মায়ের লা’শ পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে পড়ে আছে : সন্তানরা ল’কডাউনে

Apr 17, 2020 / 11:53pm
মায়ের লা’শ পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে পড়ে আছে : সন্তানরা ল’কডাউনে

ক’রো’না’ভা’ই’রাসের লক্ষণ নিয়ে মুন্সীগঞ্জের এক মায়ের লা’শ গত পাঁচ দিন ধরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পড়ে আছে। বাড়িতে ছেলে, ছেলের বউ ও দুই নাতিনসহ ৩০টি ঘর ল’কডাউনে থাকায় নি’হ’ত মায়ের লা’শে’র কোনো খবর নিতে পারছেন না।

এমনকি কুর্মিটোলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাদের কিছু জানাচ্ছেন না। হাসপাতালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রে লা’শ আছে বলে পরিবারটির দাবি। তবে আসলেই লা’শ সেখানে আছে না বেওয়ারিশ হিসেবে দা’ফন করা হয়েছে তাও পরিবারটি নিশ্চিত নয়।

স্থানীয়রা পুরো ৩০টি ঘরে ল’কডাউন করে রেখেছে। ওই পরিবারটি জানে না কি কারণে তার মা মারা গেছে। ক’রো’না না সাধারণ মৃ’ত্যু কোনো রিপোর্টই দেয়নি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে মুন্সীগঞ্জ সদরের পঞ্চসার ইউনিয়নের বিসিক এলাকার চৌধুরী বাড়িতে।

জানা যায়, শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) পঞ্চসার ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মাওলা ও মৃ’ত ব্যক্তির ছেলে নুরুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বড় ছেলে নুরুজ্জামান তার মাকে জ্বর, শ্বাসক’ষ্ট ও গলা ব্য’থা, হাঁ’পানি নিয়ে ১৩ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে চিকিৎসা শুরুর পূর্বেই কয়েকবার পাতলা পায়খানা হয়। পরে মৃ’ত্যুবরণ করেন তিনি।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিসিক সংলগ্ন চৌধুরীবাড়ির মৃত ছিদ্দিক ভান্ডারীর ছেলে মো. নুরে আলম জামানের মা নুরুন্নাহার (৬৮)কে ক’রো’না উপসর্গ নিয়ে গত পাঁচ দিন আগে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় ছেলেরা।

কিন্তু চিকিৎসার পূর্বেই তার মায়ের মর্মা’ন্তিক মৃ’ত্যু হয়। লা’শ আনতে যাচ্ছে না বলে যে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়, বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানান তার বড় ছেলে নুরুজ্জামান।

তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পজেটিভ বা নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়ার কথা কিন্তু পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল আমার মায়ের লা’শও দেয়নি। আমার মায়ের রিপোর্টও জানায়নি কুর্মিটোলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে এই ঘটনায় ওই এলাকার ৩০ বাড়ি স্থানীয় অর্ধশত লোকজন গিয়ে ল’কডাউন করে রেখেছে। নারী জ্বর, ঠান্ডা, শ্বাসক’ষ্ট ও হাঁ’পানি ও হার্টের রোগী ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। বিষয়টি প্রশাসন না জানলেও শুক্রবার বেলা ১টার সময় ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মাওলা নিশ্চিত করেছেন।

মায়ের লা’শ রেখে কিভাবে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে বাড়িতে অবস্থান করছে এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষো’ভ ও হতা’শা কাজ করছে। স্থানীয়রা সকলে আ’তংকে রয়েছে। ছোট ভাই মালয়শিয়ার প্রবাসী।

এ বিষয়ে স্থানীয় খালেক চৌধুরী জানান, পাঁচ দিন পূর্বে নুরে আলম জামান তার মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে যায়। কিন্তু মাকে নিয়ে আর বাড়িতে আসেনি। আমরা শুনতে পেরেছি যে, তার মা নুরুন্নাহার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মা’রা গেছেন। এই করোনার কারণেই ছেলে মেয়েদের কেউই লা’শ আনতে আগ্রহী না।

এ বিষয়ে ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মাওলা জানান, পরিবারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল পাঁচ দিন আগে, তাদের মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে যায়। এর পরে কি হয়েছে আমি জানি না। তবে পরিবারটি খুবই অভাবী।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহাম্মেদ বলেন, আমাদের পক্ষে তো আর লা’শ এনে দেওয়া সম্ভব না। এখন ওই বাড়িটি ল’কডাউন অবস্থায়ই থাকা উচিত। পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে। বিষয়টি জেনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে বড় ছেলে নুরুজ্জামান (৪৮) জানান, সাত দিন যাবৎ জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাস ক’ষ্ট ছিল আমার মায়ের। এই অবস্থায় যোগিনিঘাটে আত্মীয়ের বাড়িতে তিন দিন বেড়ান মা।

পরবর্তীতে আবার বাড়িতে আসেন। বাড়িতে ডা. হুমায়ুনের চিকিৎসাধীন ছিলেন সে। অবস্থার অবনতি হলে ১৪ দিন পরে ১২ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেই। ১৩ এপ্রিল আলদিতে ডা. প্রফুল্লকে দেখিয়ে পুনরায় সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি।

পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তপক্ষ ঢাকা বক্ষবিধি হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে তারা দেখে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে যাওয়ার পর তিন চার বার পাতলা পায়খানা হয়েছে। শ্বাসক’ষ্ট ও ঠান্ডা সব উপকরণই ছিল।

পরবর্তীতে চিকিৎসা করার পূর্বে আমার মা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পরে আমার মার লা’শ তারা ফ্রিজে রেখে দেয় এবং করোনা পজেটিভ হলে দেবে না আর নেগেটিভ হলে লা’শ ফেরত দেবে বলে জানায়।

১৩ এপ্রিল থেকে আজ ১৭ এপ্রিল এই রোগীর কোনো রিপোর্ট তার কাছে আসেনি এবং কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে কোনো ফোন এ পর্যন্ত আসেনি। আমি নিজে নিজেই ল’কডাউনে আছি। এলাকার লোকজনও আমাদেরকে ল’কডাউনে রেখেছে।

পাঁচ দিন ধরে মায়ের লা’শ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পড়ে আছে। পরিবারের লোকজন অপেক্ষায় আছে কখন কুর্মিটোলা থেকে ফোন আসবে যে তোমার মায়ের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ। কিন্তু পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো রিপোর্ট না আসায় পরিবারটি হ’তাশ।

মায়ের লা’শ কি তারা দেবে না? কেন দেবে না? রিপোর্টটিও কেন দিচ্ছে না? কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালটি আমাদের কাছে কি কিছু লুকাচ্ছে কিনা? এমন হাজারো প্রশ্ন এখন মৃত নুরুন্নাহারের ছেলে ও মেয়ের পরিবারের মাঝে বিরাজ করছে।

তবে কি মায়ের লা’শ বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করা হয়েছে- এরকম ভাবনাও এখন পরিবারটিকে আরো শো’কাহিত করে তুলছে। তবে এ বিষয়ে কোর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সুত্রঃ কালের কন্ঠ