সন্তানরা করোনা সন্দেহে ঘর থেকে বের করে দিল মাকে

Apr 15, 2020 / 02:07am
সন্তানরা করোনা সন্দেহে ঘর থেকে বের করে দিল মাকে

সুনামগঞ্জে অন্য জেলা থেকে আসা গার্মেন্টস কর্মীর বাড়িতে যাওয়ায় ক’রো’না হয়েছে সন্দেহ করে বৃদ্ধা মাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন সন্তানরা।

গত দুইদিন ধরে ঘরের বাইরে এলাকায় ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে আছেন অমত্য বালা দাস (৯০) নামে ওই বৃদ্ধা।

মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় সংবাদকর্মী জয়ন্ত সেন তার ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করলে ঘটনাটি দ্রুত ভা’ই’রাল হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাল্লা উপজেলার হাবিবপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা অমত্য বালা দাস। দুই ছেলের জন্মের পর স্বামীকে হারান তিনি। দুই ছেলে যোগেশ দাশ ও রণধীর দাশকে কষ্ট করে মানুষ করেন। দুই ছেলে কৃষি কাজ করলেও তাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো।

দেশের অন্য জেলা থেকে শাল্লায় আসা গার্মেন্টস কর্মীর বাড়িতে যাওয়ায় তার জন্য হোম কো’য়া’রেন্টিনের ব্যবস্থা না করে প্রতিবেশীদের কথায় মাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন দুই ছেলে।

ছেলেদের দাবি, ক’রো’নার ম’হা’মারির মধ্যে অন্য জেলা থেকে আসা মানুষের বাড়িতে যাওয়ার শা’স্তি স্বরূপ তাকে বাড়ি বের করে দেয়া হয়েছে।

বৃদ্ধ অমত্য বাল দাশ বলেন, আমার কোনো করোনা নাই বাবা। আমি কারও বাড়িতেও যাই নাই। আমি বুড়া মানুষ হাঁটতে বের হইছিলাম। পরে ঘরে গেলে ছেলেরা আমারে মিথ্যা অপ’বাদ দিয়া ঘর থাকি বাহির করিয়া দিসে।

গাঁওয়ের কেউ আমারে জায়গা দেয় না, খাওন দেয় না। তারা সবাই কয় আমি নাকি করোনা রোগী। এখন আমার ছেলেরা জায়গা দেয় না, বউরা খাওন দেয় না। গেলেই বলে তুমি দোষী ঘরে আইও না।

এ ব্যাপারে সাংবাদিক জয়ন্ত সেন বলেন, ওই নারীকে আমি রাস্তায় বসে থাকতে দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ক’রোনা সন্দে’হে ছেলেরা তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি উনার ছেলেদের কোনো অভাব অনটন নেই।

তার ছেলেরা ও কিছু প্রতিবেশী মিলে এমন কুসং’স্কারকে বিশ্বাস করে পুরো উপজেলায় বিষয়টি ছড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে ওই নারী এখন কোথাও খাবার পান না, আমি এখন উনাকে আমার ঘরে নিয়ে এসে চারটা ডাল-ভাত খাইয়েছি।

ওই নারীর দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে যোগেশ দাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, অন্য জেলা থেকে গ্রামে আসা গার্মেন্টস কর্মীর বাড়িতে যাওয়ার কারণে মাকে শা’স্তি দেয়া হয়েছে। তিনি তার শা’স্তি ভোগ করছেন।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল-মুক্তাদির হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। তিনি এখন ওই নারীর কাছে গিয়ে বিষয়টি দেখবেন। যদি বিষয়টি সত্যি হয় তাহলে আমরা ছেলেদের বিরু’দ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উল্লেখ্য যে, নিয়ামতপুর গ্রামে সম্প্রতি ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে গ্রামে আসেন অমরচাঁদ দাস। তারা বর্তমানে হোম কোয়া’রেন্টিনে রয়েছেন। ১২ এপ্রিল কে বা কারা গুজব ছড়ায় ওই বৃদ্ধা নারী তাদের বাড়ি গিয়ে চা পান খেয়েছেন। তারপর থেকেই তার ছেলেরা ও পাড়া প্রতিবেশীরা তাকে ক’রো’না রোগী অ’প’বাদ দিয়ে গ্রাম ছাড়া করে।

সুত্রঃ যুগান্তর