বাতাসে ছড়াতে পারে করোনা, আ’ক্রান্তদের খুঁজে বের করা খুব জরুরি

সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলছে। ধাপে ধাপে একে বৃদ্ধি করা হচ্ছে নানা পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে। লক্ষ্য একটাই, নতুন প্রাণঘা’তী ভা’ই’রাস সং’ক্র’মনের হার কমিয়ে আনা। পৃথিবীর সব দেশই ভুগছে একে নিয়ে যেহেতু এটি একেবারেই নতুন।
প্রথমে এর আকার সম্বন্ধে সঠিক ধারণা পাওয়া যাওয়ায় ধারণা করা হয়েছিল এটি ড্রপলেট ইনফেকশন মানে মুখ থেকে নিঃসৃত দিয়ে হতে পারে।
পরে গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, এর আকার ৪ মাইক্রনের চেয়ে কম মানে এরোসল টাইপ। বাতাসে ছড়িয়ে পরার সামর্থ রয়েছে। তাই একে মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে।
মার্চের ৩ তারিখ যখন আমরা ১০৩ তম দেশ হিসাবে জানতে পারলাম আমরাও আ’ক্রান্ত সেদিনই মার্কেট থেকে মাস্ক গায়েব হয়ে যায় ভয়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলেছে, যারা আ’ক্রান্ত তারাই মাস্ক ব্যবহার করবে তবুও আমরা সকলেই এটি ব্যবহার করেছি। সেটি কিন্তু আমাদের জন্য উপকারই হয়েছে।
বড় বড় দেশে এতো এতো মানুষ আ’ক্রান্ত কারণ এই রোগ যে শুধু যারা আক্রা’ন্ত তাদের দ্বারা ছড়ায় তা নয় বরং যাদের লক্ষন নেই তারাও ছড়ায়। মাস্ক পরে থাকাতে আমাদের সংক্রমণ তাদের পর্যায়ে হয়নি।
জাপান সরকার তাদের দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ৬ মাস পর্যন্ত। আমরা তাদের মত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী নই যে আমরাও তেমন কিছু একটা করতে পারবো। আমাদের দেশে এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে আসলে? স্টেজ ৩ না ৪? কেউ বলছেন ৩ কেউবা বলছেন ৪। যাই হোক তা মোকাবেলা করতে হবে।
আমাদের দেশ চীনের মত প্রাতিষ্ঠানিক কো’য়ারেনটাইনের ব্যবস্থা করতে পারেনি প্রথম থেকে আবার অনেক দেশের মত হাজার হাজার পরীক্ষা শুরু করতে পারেনি প্রাথমিক পর্যায়ে। যা হওয়ার হয়ে গেছে, বের হয়ে আসতে হবে সেই পর্যায় থেকে।
পাশের দেশ ভারতের একটি উদাহরণ দেখতে পারি আমরা যেখানে ছত্রিশগড়ে যাদের হোম কো’য়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের সবাইকে মোবাইলে একটি অ্যাপস ডাউনলোড করে দেওয়া হয় যা দিয়ে স্থানীয় পুলিশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
এমনকি সেই ব্যক্তি যদি নির্ধারিত স্থানের চেয়ে ২০০ মিটার বাইরে যান তাহলে সেটি তৎক্ষণাৎ পুলিশকে জানিয়ে দিচ্ছে। তাহলে তাকে নজরদারি করা বেশ সহজেই সম্ভবপর হয়।
আবার গোয়াতে তাদের দেশের নির্ধারিত ২১ দিনের লকডাউনের শেষ দিকে তিনদিন ব্যাপী ৭০০০ জনের একটি দল তৈরি করে প্রতিটি মহল্লা, বাড়িতে যোগাযোগ করবে উপস্থিত হয়ে।
সঙ্গে থাকবে থার্মোমিটার, কিছু প্রশ্ন সম্বলিত একটি প্রশ্নপত্র যার মাধ্যমে বের করে আনা সম্ভব সম্ভাব্য আক্রন্ত কিনা ব্যক্তি বা পরিবারটি। সন্দেহ হলে সেখানেই কালেকশান করা হবে স্যাম্পল এবং তার ভিত্তিতে ব্যক্তি বা পরিবারকে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
উপরের দুইটি কাজই কিন্তু আমাদের দেশে করা সম্ভব। আমাদের যেহেতু পরীক্ষা করার সেন্টার বৃদ্ধি পেয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কারণে মানুষ এখন বেশিরভাগই বাসায় অবস্থান করছে তাই এখনই উপযুক্ত সময় আক্রান্ত খুঁজে বের করা।
রোগী রোগ নিয়ে আসবে তারপর চিকিৎসা দেওয়া হবে সেটির সঙ্গে বর্তমান রোগটি মেলে না। এটি সমগ্র সমাজকে একই সঙ্গে আ’ক্রান্ত করে দিচ্ছে মুহূর্তে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে এলাকার প্রতিনিধি দিয়ে একগুচ্ছ গ্রুপ তৈরি করা যায় সহজেই।
উপরেই উল্লেখ করেছি জাপানের মত আমরা পারবো না দীর্ঘদিন অর্থনীতির চাকা আটকে রাখতে। সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়য়ের অসংখ্য ফোঁড়। সিলিকন ভ্যালি কেন্দ্রিক মতয়ানি জাদেজা ফাউন্ডেশন ভারতে আগামী ১০ তারিখ থেকে ৭২ ঘণ্টার একটি অনলাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে
যেখানে পুরস্কার হিসাবে ১০ হাজার ডলার ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্দেশ্য কী? একটাই উদ্দেশ্য, ৩০০০ হাজারের বেশি প্রতিযোগী থেকে আইডিয়া নেওয়া কিভাবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন জিনিসটা প্রয়োগ করা কোন সেক্টরে বেশি জরুরি।
সেক্টরগুলোর মাঝে রয়েছে- 1)Medical treatment and testing;
2) Travel and Tourism;
3) Mitigation – Isolation, protection/masks, and social distancing in India;
4) Social life,welfare, and awareness;
5) Research and development;
6) Open innovation for COVID-19;
7) Education and awareness; and 8)Industry.
তারা এসব ডাটা নিয়ে কেন্দ্রিয় সরকারকে পরামর্শ দেবে কীভাবে ক’রোনাভা’ইরাস মো’কাবেলা করা যায়। কারণ এই যুদ্ধে সমগ্র বিশ্ব ক্ষ’তিগ্রস্থ। যে যত দ্রুত কাটিয়ে উঠবে এই অবস্থা সেই টিকে থাকবে পরবর্তীতে।
সুনির্দিষ্ট মাথা থেকে সবসময় উপযুক্ত বুদ্ধি বের হবে সবসময় তা আশা করা ভুল। একটি সমস্যাকে একেকজন একেকভাবে সামলাতে পারে। কাজেই যিনি স্বাস্থ্যে কাজ করেন তিনি যে অর্থনীতির বুদ্ধি রাখেন না তা ভুল।
আমাদের তুলনায় ভারত বিপুল জনগোষ্ঠীর দেশ। তারা যে পন্থা অবলম্বন করে চেষ্টা করছে এটি সামলাতে আমাদের হয়ত একইভাবে প্রয়োগের প্রয়োজন নেই; তবে কৌশলের ধারাগুলি ভাবার সময় বেশি নেই বলে যত দ্রুত আমরা পরিকল্পনা ঠিক করবো আমরা তত সহজেই লোকসান কমিয়ে আনতে পারবো।
সুত্রঃ যুগান্তর