করোনা আতঙ্কে দেশ! খিচুড়ি রান্নার বয়ান দিলেন এমপি নদভী

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক। দেশে দেশে হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে এই ভাইরাসের সংক্রমণে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে মারা গেছেন সাতজন। আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন। সরকার ইতিমধ্যে ছুটি ঘোষণা করে কার্যত লকডাউন করেছে পুরো দেশ।
সরকার-প্রশাসন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মানুষকে ঘরে রাখতে। এমন এক ভীতিকর পরিস্থিতিতে রান্না ঘরে চুলার ওপর একটি ডেকসিতে কাঠি নাড়তে নাড়তে হাসোজ্জ্বল বদনে ভিডিও ফুটেজ ধারণ করেছেন চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নদভী।
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণসহ নানা কারণে বিতর্কিত এই সংসদ সদস্যের এমন ভিডিও চিত্র এলাকার মানুষের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।
ভিডিওর মাধ্যমে তিনি তাঁর এলাকার জনগণকে ‘খিচুড়ি রান্না’র বয়ান শুনিয়েছেন। এই ভিডিওটি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেছেন। ভিডিও দেখে বোঝা যায়, এটি তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা ধারণ করেছেন। কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দিয়েছেন রিজিয়া রেজা চৌধুরী।
আবু রেজা নদভী বৃহস্পতিবার রাতে তার বাসায় রান্না ঘরে লখনৌ’র স্টাইলে খিচুড়ি রান্না করছিলেন। আর তাঁর নির্বাচনী এলাকা সাতকানিয়া লোহাগাড়ার সাধারণ মানুষ সরকারি অনুরোধে ঘরে না থেকে হাটহাজারে ঘুরছিলেন। তাঁর নিজ গ্রামেও বিকেলে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক মানুষর জটলা।
তিনি নিজে এলাকায় অবস্থান না করে নগরীর বাসায় অবস্থান করছেন। যদি এলাকায় অবস্থান করতেন এবং মানুষকে ঘরে থাকার জন্য বোঝাতেন, তাহলে প্রশাসনের পক্ষে মানুষকে ঘরে রাখা আরো সহজ হতো বলে মনে করেন সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে ময়দানে হয়রান হচ্ছি সাধারণ মানুষকে বোঝাতে। আর তিনি রান্না ঘরে খিচুড়ি রান্নার থেরাপী শেখাচ্ছেন। এসব দিয়ে কী সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে?’ সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভীর ভিডিও চিত্র দেখে এতোটাই ক্ষিপ্ত হয়েছেন যে, তিনি নাম প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতেও রাজি হননি।
ভিডিও চিত্রে সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভী বলেন, ‘প্রিয় সাতকানিয়া-লোহাগাড়াবাসী, আমি আপনাদের প্রিয় এমপি নদভী বলছি। কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। ভালো করে ইবাদাত করে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য ফরিয়াদ করেন। আর সরকারের যে নির্দেশনা আছে, সেগুলো মেনে চলুন।’
এরপরই তিনি বলেন, ‘আপনারা ঘরে বসে বসে লেখাপড়া করুন। নামাজ পড়েন এবং রান্না ঘরে আসেন। রান্না করেন। আমি এখন লখনউ’র স্টাইলে রান্না করছি। সবাই আজকে খাবেন; সবাইকে খিচুড়ির দাওয়াত।’
এই পর্যায়ে তাঁর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। তিনি শিখিয়ে দেন স্ত্রী ও পরিবারকে সময় দেওয়ার কথা বলার জন্য। তখন এমপি নদভী বলেন, ‘পরিবারকে সময় দিচ্ছি। স্ত্রীকে সময় দিচ্ছি। আপনারাও পরিবারকে সময় দেবেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’
প্রসঙ্গত, এই সংসদ সদস্য যে হাঁড়িতে কাঠি নেড়ে নাড়াচাড়া করছিলেন, সেই হাঁড়ির খাবার নিশ্চয় এলাকার মানুষকে খাওয়ানোর মতো বড় হাঁড়ি নয়। সেখানে খিচুড়িও ছিল বলে অনুমান করা যায় না।
কারণ তিনি যেভাবে কাঠি নাড়ছিলেন তাঁতে মনে হতে পারে, আসলে হাঁড়িটি শূন্য। সংসদ সদস্য শুধুই ভিডিও ধারণের প্রয়োজনে কাঠি নেড়ে এবং নিজের গায়ে বাবুর্চির পোশাক জড়িয়ে নিজকে বাবুর্চি হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছেন।
জাতির এমন ক্রান্তিকালে নিজ সংসদীয় এলাকা সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় অবস্থান না করে এবং দরিদ্র্য মানুষের পাশে না থেকে নগরীর বাসায় রান্না ঘর থেকে বয়ান প্রচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন মানুষকে অনেক বোঝাচ্ছে।
কিন্তু মানুষ বুঝতে পারছে না। আমি এখনই আবার বলে দেব, আগামীকাল থেকে প্রশাসন আরো কড়াভাবে ব্যবস্থা নেবে।’ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে- এমনটা বললেও এই সংসদ সদস্য নিজে এলাকায় যাবেন, মানুষের পাশে থাকবেন-এমন কোনো কথা বলেননি। নিজ গ্রামের মানুষও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’