বমি করলেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে: ডাক্তারের অবহেলায় স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

Mar 20, 2020 / 11:15pm
বমি করলেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে: ডাক্তারের অবহেলায় স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

পানি খেয়ে বমি করলেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে, চিন্তার কিছু নেই। এমন আশ্বাস দিয়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া রোগীর কাছে যাননি কোনো ডাক্তার।

ওই সময় রোগী না দেখেই নিজ টেবিলে বসেই ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন ওই সময় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার শিউলী রানী দাস।

এভাবে ১৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর মুমূর্ষু অবস্থায় রোগীর কাছে তড়িঘড়ি গিয়ে হাজির হন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিঠুন রায়। এ সময় পূর্বের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ২টি ইনজেকশন পুশ করার পরই রাজৈর বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ইয়াসমিন (১৪) মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

মৃত ইয়াসমিন আলমদস্তার গ্রামের ইলিয়াস শেখের মেয়ে।

মুহূর্তেই তার খবর ছড়িয়ে পড়লে ইয়াসমিনের স্বজনরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে ছুটে আসে। তাদের চিৎকারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহানা নাসরিন এবং ওসি খন্দকার শওকত জাহান ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বিচারের আশ্বাস দেন।

ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

ইয়াসমিনের মা লিপি বেগম অভিযোগ করে জানান, আমার মেয়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার সময় পেট ওয়াশ না করেই বলেন পানি খেয়ে বমি করলেই ঠিক হয়ে যাবে। এরপর একটি ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। তারপর বার বার ডেকেও কোনো ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, এ অবস্থার ১৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমার মেয়ের অবস্থার অবনতি হলে ডা. মিঠুন রায় এসে আগের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পরপর ২টি ইনজেকশন দেন। এরপরই খিচুনি দিয়ে আমার মেয়েটি নিরব হয়ে যায়। অথচ আজ সকাল পর্যন্ত মেয়েটি আমার সঙ্গে ভালভাবে কথা বলেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবিকা জানায়, আমরা স্যারকে নিয়ে যখন রোগীর কাছে গেছি তার আগেই সব শেষ।

মেয়ের মামা শান্টু মিয়া জানান, ডাক্তারের অবহেলায়ই আমার ভাগ্নির মৃত্যু হয়েছে।

অভিযুক্ত ডা. শিউলী রানী দাসের মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল ইয়াসমিনের মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অবহেলা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।