বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্তা: রাষ্ট্রপতি

Mar 17, 2020 / 10:38pm
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্তা: রাষ্ট্রপতি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর শুভক্ষণে জাতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

জাতির উদ্দেশে ভিডিও বার্তায় দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি তাদের কাছ নতি স্বীকার করব না। ফাঁ’সির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা’।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ ও জনগণের প্রতি তার অসামান্য অবদানের জন্য বাংলা, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু আজ এক ও অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে। তার নীতি ও আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সাহসী, ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব- এ প্রত্যাশা করি।

মুক্তিযু’দ্ধের চেতনায় ঐ’ক্য’ব’দ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করাই হোক মুজিববর্ষে সবার অঙ্গীকার।

তিনি বলেন, ‘আজ ১৭ মার্চ, বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। এ বছর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্র’দ্ধা জানাই।

বছরজুড়ে দেশ-বিদেশে সাড়ম্বরে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে সরকার ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে। জন্মশতবার্ষিকীর এই বর্ণাঢ্য আয়োজন যথাযথ উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে উদযাপনের জন্য আমি দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ শৈশব থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মানবদরদি কিন্তু অধিকার আদায়ে আপসহীন।

চল্লিশের দশকে এই তরুণ ছাত্রনেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সংস্পর্শে এসে সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৪৮ সালে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’, ’৫২-এর ভা’ষা’আ’ন্দো’লন,

’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮-এর সামরিক শা’স’ন’বি’রোধী আ’ন্দো’লন, ’৬৬-এর ৬-দফা, ’৬৯-এর গ’ণ’অ’ভ্যু’ত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনসহ বাঙালির মু’ক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আ’ন্দো’ল’নে তিনি নেতৃত্ব দেন।

এ জন্য তাকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে অমানসিক নি’র্যা’তন। কিন্তু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনও শা’স’কগোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করেননি।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বাঙালির আবেগ ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ব’জ্র’কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মু’ক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, স্বাধীনতার পর পাকিস্তান কা’রা’গার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। যু’দ্ধ’বি’ধ্ব’স্ত অর্থনীতির পুনর্গঠনে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। মিত্রবাহিনীর সদস্যদের দেশে প্রত্যাবর্তন, স্বল্পসময়ের মধ্যে দেশের সংবিধান রচনা,

জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণ, সবস্তরে দু’র্নী’তি নির্মূল, কৃষি বিপ্লব, কল-কা’র’খানাকে রাষ্ট্রীয়করণসহ দেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু স্বাধীনতাবি’রো’ধী ঘা’ত’কচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হ’ত্যা’র মধ্য দিয়ে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি।

রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নীতি ও আদর্শের প্রতীক। বঙ্গবন্ধু রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কা’রা’গারের রোজনামচা’সহ তার ওপর লিখিত গ্রন্থ অধ্যয়ন করে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আগামীতে জাতিগঠনে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার আদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তার নীতি ও আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সা’হ’সী, ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব- এ প্রত্যাশা করি।’

ক’রো’না’ভা’ই’রাসের বিষয়ে গু’জবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নভেল ক’রো’না’ভা’ই’রাসের সং’ক্র’মণ ম’হা’মা’রী আকার ধারণ করেছে। এ রোগের বিস্তৃতি ঠেকাতে সরকার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

এতে আ’ত’ঙ্কি’ত হওয়ার কিছু নেই। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের সবার সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইইডিসিআর প্রতিনিয়ত দেশবাসীকে সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করছে।

স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমি দেশবাসীকে এগুলো মেনে চলার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। কোনো ধরনের গু’জব ও অ’প’প্রচারে বি’ভ্রা’ন্ত না হতে আমি সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।’