৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি সম্পন্ন

চারদিন বিরতির পর কঠোর নিরাপত্তায় টঙ্গীর তুরাগ তীরে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে।
তবে বৃহস্পতিবার বাদ আছরই শুরু হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রাক-বয়ান। এ পর্বে মাওলানা সাদ অনুসারীরা ইজতেমায় অংশ নিবেন।
রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। এ পর্বের প্রথমদিন শুক্রবারের জুমার নামাজেও লাখ লাখ মানুষ অংশ নেবেন ইজতেমা কর্তৃপক্ষের ধারণা।
এ পর্বেও মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে থাকছে বিশেষ ট্রেন ও বাস সার্ভিস। নেয়া হয়েছে নিরাপত্তা সার্বিক বিশেষ ব্যবস্থা। প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও থাকছে বিশ্ব ইজতেমার পুরো ময়দান সিসি ক্যামেরার আওতায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, তুরাগ পাড়ের প্রায় ১৬৫ একরেরও বেশি এলাকার বিশাল প্যান্ডেলজুড়ে ইজতেমার মূল সামিয়ানায় ২য় পর্বে মুসল্লিদের অবস্থানের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
যাতে করে দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিরা অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারেন। সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি সাদ অনুসারী মুসল্লিরাও অংশ নিয়েছেন মাঠ প্রস্তুতের জন্য।
তবলিগের বিভিন্ন মেয়াদের চিল্লায় থাকা আর ইজতেমার দাওয়াতের কাজে যারা ছিলেন সে সব মুসুল্লিও দলে দলে বৃহস্পতিবার আছরের আগেই ইজতেমা ময়দানে যোগ দেবেন।
তুরাগ নদে পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় প্রথম পর্বের আগেই ভাসমান ব্রিজ তৈরি মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য র্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে ২য় পর্বেও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, সিসিটিভি রয়েছে।
বিদেশিদের জন্য থাকছে আগের আলাদা স্বাস্থ্য ক্যাম্পও। বিদেশি নিবাসে গ্যাস সংযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা প্রথম পর্বের ন্যায় এ পর্বেও থাকছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার রাতে মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সরকার মুসল্লিদের সুবিধার্থে ইজতেমা মাঠে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।
এর মধ্যে ১৩টি নলকূপের মাধ্যমে প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্যালন খাবার ও ওজু-গোসলের পানি সরবরাহ করবে। ৮ হাজারের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে টয়লেট ব্যবহার করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা প্রথম পর্বের ন্যায় এ পর্বেও তারা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আমরা তাদের অবস্থানের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে অবস্থান নিতে পারবেন।
বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ইজতেমা ময়দানের পাশে নিউ মন্নু ফাইন কটন মিলে স্থাপন করা হয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। এ সব মেডিকেল ক্যাম্প থেকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ মো. আনোয়ার হোসন বলেন, দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় ইতিমধ্যে অধিকাংশ মুসল্লিরা আসছেন। এ পর্বের বিশ্ব ইজতেমায়ও প্রথম পর্বের মতো পুলিশ কাজ করছে। ইজতেমায় সার্বিকভাবে সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য গত পর্বের তুলনায় এ পর্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েনসহ পুরো ময়দান সিসিটিভি ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইজতেমার প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাতে মাওলানা যোবায়ের অনুসারীদের নিকট থেকে মাওলানা সাদ অনুসারীদের নিকট মাঠের সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। এ সময় সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ইজতেমার দু’পক্ষের মুরুব্বীরাও উপস্থিত ছিলেন।
তাবলীগের সাদপন্থী মুরুব্বী সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম জানান, দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় পুরো ময়দানকে ৮৩টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে আগের পর্বের মুসল্লিদের ফেলে যাওয়া ময়লা,
আবর্জনা তথা নোংরা এবং মাঠে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের সঙ্গে তাবলিগের কর্মীরা মাঠকে ব্যবহার উপযোগী করেছে। বৃহস্পতিবার বাদ আছরের আগেই এ পর্বে অংশগ্রহণকারী চিল্লাধারী মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে যোগ দেবেন।
গত ১০ জানুয়ারি শুরু হয়েছে এবারের তিন দিনের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।