টানা ১০ বছর ছিলেন কাউন্সিলর, এখন জীবিকা চলে ভ্যান চালিয়ে

১০ বছর কাউন্সিলর ছিলেন। এখন তিনি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই সংসার চলে বলে জানিয়েছেন ৬৮ বছর বয়সী বাবু দাস।
২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোবরডাঙা পুরসভার সিপিএমের কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। সারা জীবন বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী মানুষটি অবশ্য মানুষের জন্য কাজ করেছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর।
বহু মানুষকে সরকারি সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। সরকারি প্রকল্পে বাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য পাকা ড্রেন করেছেন, পিচের রাস্তা করেছেন। মানুষকে সরকারি প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দিলেও তিনি নিজে সরকারি ঘর নেননি।
মানুষের বিপদে আপদে এখনো ছুটে যান জনপ্রতিনিধি না হয়েও। এলাকার লোকজনের বক্তব্য, অনেক জনপ্রতিনিধি ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। বাবুকে এই বয়সেও ভ্যান টানতে হচ্ছে।
তিন কাঠা জমি কিনে বাড়ি করেছিলেন। যদিও বাড়ির দেয়াল প্লাস্টার করতে পারেননি। মেঝেও কাঁচা। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। জমি কিনে বাড়ি করতে এবং মেয়েদের বিয়ে দিতে প্রচুর ধার দেনা হয়েছে।
বাধ্য হয়ে নিজের বসত বাড়ি বিক্রি করেছেন। যার কাছে বিক্রি করেছেন, তাকে অনুরোধ করে এক বছর থাকার সুযোগ মিলেছে মাত্র। প্রথমে ছিলেন মুদি দোকানি। ২০১১ সাল নাগাদ তিনি দমদমে ডেকরেটরে কাজ নেন। বাঁশ বাঁধা কাপড় লাগানোর কাজ করতেন। পরবর্তী সময়ে গোবরডাঙায় একই কাজ করেছেন।
কিন্তু বয়সের কারণে ওই কাজ এখন করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে ইঞ্জিন ভ্যান কিনে ভাড়া খাটছেন। বাড়িতে স্ত্রী জ্যোৎস্না নারকেল পাতা কেটে শলা বের করে বিক্রি করেন। ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চালাচ্ছেন বলে বাবুর অবশ্য কোনো আক্ষেপ নেই।
তার কথায়, যখন কাউন্সিলর ছিলাম, মানুষের জন্য কাজ করেছি, পরিষেবা দিয়েছি। নিজের কথা ভাবিনি। এখন ভ্যান চালাচ্ছি। মান সম্মানের কথা ভাবি না। ভ্যানটাই আমার রুজি রুটির ব্যবস্থা করে।
তবে কাউন্সিলর হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। এলাকার মানুষের কথায়, বাবু কাউন্সিলর থাকার সময় কোনো দল দেখতেন না। তিনি রাজনৈতিক রঙ না দেখে সেবা করতেন।
পুরপ্রধান তৃণমূলের সুভাষ দত্ত বলেন, বাবু একজন সৎ মানুষ। তিনি গুছিয়ে নেওয়ার মানসিকতার মানুষ নন।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন