নির্মাণকাজ শেষ হলেও চালু হয়নি হাসপাতাল

নির্মাণকাজ শেষ হলেও চালু হয়নি হাসপাতাল। ‘সংকটাপন্ন অনেক রোগী পথেই মারা যাচ্ছে। অথচ আমাদের এলাকার কৃতী সন্তান সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে নির্মিত হাসপাতালটি চালু হলে শুধু আমরা নই, পুরো জেলাবাসী উপকৃত হতো।’
এভাবেই ক্ষোভের কথাগুলো বলছিলেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ সুলতান রাজন। তবে এই ক্ষোভ শুধু তাঁর একারই নয়, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও হাসপাতালের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে পুরো জেলাবাসীর মনেই ক্ষোভ বিরাজ করছে।
হাসপাতালের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরাও। ইন্টার্ন চিকিৎসক দেবাঞ্জন পণ্ডিত বলেন, ‘সাড়ে আট মাস ধরে ইন্টার্নশিপ করছি। কিন্তু আমাদের জন্য চার কিলোমিটার দূরে সদর হাসপাতালে আসা-যাওয়ার জন্য কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। আমাদের নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে যাওয়া-আসা করতে হয়। এতে করে আমাদের অর্থ ও সময় দুটোই নষ্ট হচ্ছে।’
এমবিবিএস পরীক্ষার্থী মুমতাহিনা রহমান বলেন, ‘রাতেও ইন্টার্নদের ডিউটি করতে হয়। কিন্তু মেয়ে হিসেবে এটি আমাদের জন্য কঠিন। কারণ, নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি চলে আসে। নিজস্ব ক্যাম্পাসে অবস্থিত হাসপাতালটি চালু থাকলে নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা থাকত না।’
আরেক এমবিবিএস পরীক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের রাস্তায় অনেক জ্যাম। এই জ্যাম পেরিয়ে সদর হাসপাতালে যাওয়া-আসা করতে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায়। এতে করে আমাদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
পঞ্চম বর্ষের ছাত্র আহসান হাবীব রানা বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের মেডিকেল কলেজের পর অনেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরুর পর এরই মধ্যে চালু হয়ে গেছে।’
সাবেক স্থানীয় সরকার ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সক্রিয় উদ্যোগে চার জাতীয় নেতার অন্যতম বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে ২০১২ সালে ৫৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার যশোদলে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু এর আগেই জেলা সদরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শেষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন ও ছাত্রাবাসের নির্মাণকাজ শেষ হলে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক দপ্তরগুলো মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়। চলতি বছরের ১৫ আগস্ট চালু হয় হাসপাতালের আউটডোর সেবা কার্যক্রম।
কিন্তু অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শেষ হলেও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চালু হয়নি। অথচ হাসপাতালের কোটি কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতিও বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। রোগীদের শয্যাসহ অনাদরে-অবহেলায় পড়ে থাকা আসবাবপত্রে জমছে ধুলোর প্রলেপ। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ না হওয়াকে হাসপাতাল চালু না হওয়ার কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. সজল কুমার সাহা জানান, চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়সহ আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ না হওয়ার কারণেই হাসপাতালটি চালু হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘এর ফলে শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এবং সেইসঙ্গে সাধারণ জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যত দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও জনগণের তত তাড়াতাড়ি মঙ্গল হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘চিকিৎসকসহ অন্যান্য লোকবল নিয়োগের বিষয়টি আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবহিত করেছি। আশা করি, দ্রুত হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে।’
হাসপাতালের অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শেষ হলেও এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র থাকার পরও হাসপাতাল চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অবিলম্বে হাসপাতাল চালুর দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিদিন কষ্ট করে দিনে ও রাতে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। এ জন্য জেলা শহরের তীব্র যানজট, কখনো বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলা করে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজের পক্ষ থেকে যাতায়াতের জন্য বাস প্রদান করা হলেও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজেদের খরচেই আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব, হাসপাতাল কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে জনগণের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতসহ শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভোগান্তি নিরসনে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আশা করছেন কিশোরগঞ্জবাসী।