ভারতের হৃদয় ছিন্নভিন্ন করবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন : সোনিয়া গান্ধী

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ভারতের হৃদয় ছিন্নভিন্ন করবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। গতকাল শনিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে আয়োজিত ‘ভারত বাঁচাও’ সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
এ সময় বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে সোনিয়া বলেন, ‘এ আইন ভারতের হৃদয় ছিন্নভিন্ন করবে। এতে মোদি-অমিত শাহর কিছু যায় আসে না। আমাদের দেশ ও সমাজে মাঝে মাঝে এমন কিছু সময় আসে, যেখানে কোনো না কোনো দিকে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’
এ সময় ভারতকে বাঁচাতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান সোনিয়া। সোনিয়া গান্ধী ছাড়াও একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী ও সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র।
রাহুল গান্ধী নাগরিকত্ব আইনের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এ আইনের মধ্যদিয়ে মোদি উত্তর-পূর্ব ভারতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন। পুরো বিশ্ব আমাদের দেখে বলছে, ভারতে এসব কী ঘটছে।’
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ‘দেশের চলমান অবিচারের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করবে না, তারা ভীতু। ভারত অহিংসা ও ভ্রাতৃত্বের দেশ।’
এদিকে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়নে প্রথম রাজ্য হবে পশ্চিমবঙ্গ, এমনটা দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যদিও মমতা বন্দোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘কোনোভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের এই আইন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কার্যকর হতে দেব না।’
মমতা বলেন, ‘নিশ্চিন্তে থাকুন, বাংলায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন হচ্ছে না। আসুন আমরা সবাই মিলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করি। কারো সঙ্গে কারো ভেদাভেদ নয়।’
এদিকে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্য। এরই মধ্যে রাজ্যগুলোতে বাস ও রেলস্টেশনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশকিছু ট্রেনে। এ ছাড়া অর্ধশত বাসেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এদিকে এ আইনের প্রতিবাদে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, নয়াদিল্লি, পাঞ্জাব, কেরালাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ, বেলডাঙ্গা, উলুবেড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গাড়ি ও বাস ভাঙচুরের পাশাপাশি রেলস্টেশনে অগ্নিসংযোগের খবর দিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। গতকাল শনিবার রাজ্যগুলোর বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ, রেল-সড়কে অবরোধ দেখা গেছে। বেশিরভাগ এলাকায় ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি বাস ভাঙচুর ও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে উত্তরপ্রদেশের আলিগড় শহরে ছাত্র-শিক্ষকরা বিক্ষোভ করেছেন। কিন্তু ক্যাম্পাসেই ওই বিক্ষোভ মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। ছাত্রদের ওপরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিরতায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স।