সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার সুযোগ চাইলেন সু চি

রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে গাম্বিয়ার মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। তিন দিনের শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে নেদারল্যান্ডসের হেগে উপস্থিত ছিলেন দেশটির কার্যত সরকার প্রধান ও নোবেলজয়ী নেত্রী অং সাং সু চি। শুনানির শেষ দিনে যুক্তিতর্কের সময় মিয়ানমারে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার সুযোগ চাইলেন তিনি। এসময় তিনি গাম্বিয়ার মামলা খারিজ করারও আবেদন জানান।
সু চি বলেন, তারা বিষয়টির আন্তর্জাতিকীকরণ চান না। দেশের সামরিক আদালতেই এ সংক্রান্ত বিচারের সুযোগ চান। সুচি তার চূড়ান্ত আবেদনে বলেন, গাম্বিয়ার মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হোক। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও প্রত্যাখ্যান করতে বলেন তিনি।
সু চির দাবি, তাদের সরকার সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় কাজ করছেন এবং তারা তা চালিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, আদালতের কাছে আমরা সেই সুযোগ চাই।
এর আগে বুধবার শুনানির দ্বিতীয় দিনে রোহিঙ্গা গণহত্যার পক্ষে সাফাই গেয়ে সু চি বলেছিলেন, রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার পরই, বিচ্ছিন্নতাবাদ দমাতে অভিযান চালানো হয়, এর জেরে কিছু লোক সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে।
মিয়ানমারের নেত্রী বলেন, ‘যদি দেশের অভ্যন্তরে গণহত্যার উদ্দেশ্যে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে তবে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত সেনা সদস্য, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর বাইরে আমি এ বিষয়েও নিশ্চিত করছি যে, আমাদের সবার নজর সেনা সদস্যদের দিকে। একইসঙ্গে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বক্তব্যে একবারের জন্যও রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করে সু চি বলেন, ‘রাখাইনে সেনা অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ হয়ত উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে তার পেছনে যে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল- এমন ধরে নেয়াটাও মিয়ানমারের জটিল বাস্তবতায় ঠিক হবে না।’
এর আগে শুনানির প্রথম দিনে মামলার বাদি গাম্বিয়া রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে অন্তবর্তীকালীন সিদ্ধান্তের আবেদন করে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত হামলার অজুহাত দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় উগ্র বৌদ্ধরা। রোহিঙ্গাদের ওপর কাঠামোবদ্ধ যে সহিংসতা ও বর্বরতা চালানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করেছে মিয়ানমার। আর এই অভিযোগেই ওআইসির সহায়তায় মিয়ানমারকে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে এনেছে পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া।