মিথ্যাবাদীকে আসুন গাল দেই ‘সুচি’ বলে

Dec 13, 2019 / 04:46pm
মিথ্যাবাদীকে আসুন গাল দেই ‘সুচি’ বলে

অনর্গল মিথ্যা বলায়ও পটু তিনি। হেগের আদালতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুনানি না হলে তা অজানাই থেকে যেতো। বিশ্বের সামনে এমন সুন্দর করে মিথ্যা বলা হয়তো এটাই প্রথম। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মিথ্যাবাদীকে আজ থেকে গাল দেবো ‘সুচি’ বলে। কেউ মিথ্যা বললেই বলবো, তুই ‘সুচি’। আসুন, আমরা সবাই মিথ্যাবাদীকে গাল দেই ‘সুচি’ বলে। বেঈমানির জন্য ‘মীর জাফর’ যেমন গালি হিসেবে সবার মুখে মুখে। তেমনি আজ থেকে ইতিহাসের পাতায় মীর জাফরের পাশাপাশি অং সান সুচি’র নামও স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেল।

মীর জাফরের পর আরেক ঘৃণিত নাম সুচি। দুঃখের বিষয় হলো- দুটি ঘৃণিত নামই বাংলার সঙ্গে জড়িত। একজন বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার প্রধান সেনাপতি মীর জাফর। ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেঈমানি করে নবাবকে পরাজিত করে।

এমন সূক্ষ্মভাবে কাজ করে যে নবাব টেরই পায়নি। কিন্তু নবাব টের না পেলে কি হবে? গোটা ভারতবর্ষ সেদিন টের পেয়েছিলেন মীর জাফরের চাতুরি। তাই তো তিনশত বছর পর এসেও মীর জাফরের বংশধরদের ভারতে মুখ লুকিয়ে চলতে হয়। ঘরের চার দেয়ালে বন্দি থাকতে হয়। মীর জাফরের বংশধর হিসেবেও নিজেকে পরিচয় দেয় না।

এর চেয়ে বড় গ্লানি বংশধরদের জন্য আর কি আছে? তেমনি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি সেখানকার রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জাতিকে বিনাশ করতে সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দেয়। ২০১৭ সালে রাখাইনের গ্রামে গ্রামে খুন, ধর্ষণ, লুট বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়। কিন্তু সুচি তখন ক্ষমতার মসনদে বসে মুচকি হাসছিলেন। রোহিঙ্গাদের ভাষাও বাংলার অনেকটা কাছাকাছি। তারা নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশও তাদের ওপর নির্যাতন দেখে চমকে উঠে। সীমান্ত খুলে দেয়। প্রায় এগার লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। গোটা বিশ্ব তখন এ ঘটনায় মিয়ানমারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

নানা ভাবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, বিভিন্ন রাষ্ট্র চাপ দেয় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও করে। কিন্তু দুই দুইবার চুক্তি ভঙ্গ করে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করেই তাদের ফিরিয়ে নেয়ার নাটক করে। এটি যেমন, এক হাতে ডাকা আরেক হাতে না করার মতো। এ অবস্থায় আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে। তিনদিন ধরে হেগেতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি চলছে। সেখানে হাজির হন সুচি। বুধবার শুনানিতে অংশ নিয়ে সুচি বেমালুম গণহত্যা, ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেন। একের পর এক মিথ্যা বলে যান।

তিনি একটি মানচিত্র দেখিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গান। আফসোস, যে সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে তিনি মিথ্যা ভাষণ দিলেন, সেই সেনাবাহিনীই তাকে বছরের পর বছর গৃহবন্দি করে রেখেছিল। এখনো মিয়ানমারের প্রধান দলের এক নম্বর ব্যক্তি হয়েও তিনি সরকার প্রধান কিংবা রাষ্ট্র প্রধান হতে পারেননি। আফসোস, একদিন বাংলাদেশসহ বিশ্ব এমন মিথ্যাবাদী নেত্রীর জন্য কেঁদেছে। হেগের এ ঘটনা না ঘটলে বিশ্ব হয়তো জানতেই পারতো না সুচি এত সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারেন? তাই বলছি, এখন থেকে মিথ্যাবাদীকে গাল দেয়া হউক সুচি বলে। এটাই সুচির জন্য প্রযোজ্য। এতে সুচির উত্তরসূরিদেরও মীর জাফরের উত্তরসূরিদের মতো মাথা নিচু করে চলতে হবে। সুচি’র বংশধর পরিচয় দিতেই লজ্জাবোধ করবে।