যে কারনে বিয়ের আগে মেডিকেল টেস্ট করবেন?

Dec 12, 2019 / 09:12pm
যে কারনে বিয়ের আগে মেডিকেল টেস্ট করবেন?

আমাদের সমাজে ছেলেমেয়েরা বিয়ের মাধ্যমে নতুন জীবনের শুরু করে থাকে। বিয়ের পরে তাঁদের থেকে জন্ম হয় নতুন প্রজন্মের। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই আমাদের নিজেদের ভুল অথবা না জানার কারণে নতুন প্রজন্ম মায়ের গর্ভেই অথবা এই পৃথিবীর মুখ দেখলেও কিছু সময়ের ব্যবধানে আমাদের মায়ার বাঁধন ছেড়ে পাড়ি জমায় না ফেরার দেশে।

মেডিকেল সায়েন্সে এমন কিছু রোগ আছে যে রোগগুলো বংশগত, যেসবক্ষেত্রে বিয়ের আগে আমরা নিজেরা সতর্ক হলে অনেকাংশেই সেগুলো থেকে আমরা আমাদের আগামি প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারি।

বিয়ের আগে যে মেডিকেল টেস্টগুলো করা জরুরি-

১. রক্তের গ্রুপ নির্ণয়: ছেলের রক্তের গ্রুপ যদি পজিটিভ হয়, তাহলে মেয়ের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হওয়া ভালো। আর যদি ছেলের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয়, তাহলে মেয়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে ভালো। কিন্তু নেগেটিভ গ্রুপ কোনো মেয়ের সঙ্গে পজেটিভ কোনো ছেলের বিয়ে হলে তাদের সন্তান জন্মদানের সময় কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। এমনকি গর্ভপাত বা শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

যেমন-ছেলের রক্ত যদি পজিটিভ আর মেয়ের যদি নেগেটিভ হয়, তবে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা না হলেও দ্বিতীয় সন্তান থেকে সমস্যা শুরু হতে পারে। তাই রক্তের গ্রুপ জানা জরুরী।

২. সিবিসি টেস্ট: মুলত ছেলে বা মেয়ে থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না তা জানতে সিবিসি টেস্ট অর্থাৎ complete blood count টেস্ট গুরুত্বপূর্ন। সিবিসি টেস্টে হেমোগ্লোবিন, এমসিভি, এমসিএইচসি নরমাল থাকে থাকে তবে সমস্যা থাকার কথা না কিন্তু যদি নরমাল না থাকে তবে নিশ্চিত হতে অবশ্যই নিকটস্থ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

টেস্টে যদি ছেলে-মেয়ের দুইজনই থ্যা্লাসেমিয়ার বাহক হয়ে থাকেন তবে বিয়ে না করার মাঝেই কল্যাণ। কেননা তাদের মাঝে বিয়ে হলে তাঁদের এক-চতুর্থাংশ সন্তানও থ্যালাসেমিয়া সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৪ হাজার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর জন্ম হয়। অন্যদিকে থ্যালাসেমিয়ার জিন বাহক মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। থ্যালাসেমিয়া রোগের কোনো লক্ষণ বাহ্যিকভাবে দেখা না গেলেও শরীরের মাঝে থ্যালাসেমিয়ার জিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে। আর ছেলে-মেয়ের দুইজনই থ্যা্লাসেমিয়ার বাহক হয়ে থাকলে বিয়ের পরে সন্তানের মাঝে এই রোগ প্রকাশ পায়।

৩. হেপাটাইটিস ভ্যাক্সিন: বিয়ের আগেই ছেলে-মেয়ের মাঝে কারো হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি আছে কিনা এ বিষয়টি জেনে নেয়া ভাল। কারণ হেপাটাইটিস সেরে গেলেও কোনো মেয়ে যদি বি বা সি এ আক্রান্ত হয় তাহলে তার থেকে সংক্রমিত হয়ে ছেলে ও সন্তানের শরীরে যেতে পারে।

এক্ষেত্রে বিয়ের আগেই হেপাটাইটিস এ ও বি ভ্যাক্সিন নিয়ে নেওয়া উচিৎ। এসব সচেতনতা আমাদের কারো ক্ষেত্রে হয়তোবা দুঃখের কারণ হতে পারে কিন্তু ভবিষৎ প্রজন্মেরর জন্য হলেও বিয়ের আগে মেডিকেল টেস্টগুলো করা উচিত।

লেখক: কামরুজ্জামান নাবিল

শিক্ষার্থী (ডক্টর অফ মেডিসিন) ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়,ইস্পাহান, ইরান