বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মুখর ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আপিলের রায় ঘোষণা শেষে আদালত চত্বরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে আদালত চত্বরে ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে অবস্থান নেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরাও।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে আদালত খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের দেওয়া খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সর্বসম্মতিক্রমে জামিন নাকচ করে দিচ্ছি। মেডিকেল বোর্ডকে তাঁর (খালেদা জিয়া) প্রপার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা নিতে বলছি।’
আদালতকক্ষ থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আদালত স্বীকার করে নিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। তবু কেন জামিন দিলেন না আমরা জানি না। কেন এই আদেশ দিয়েছেন বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এর আগে আজ সকাল ১০টা ১০ মিনিটে খালেদা জিয়ার জামিনের আপিল শুনানি শুরু হয়। শুরুতে বিএসএমএমইউর মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট আপিল বিভাগে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর। এরপর রিপোর্ট পড়ে দেখেন প্রধান বিচারপতি।
রিপোর্টে বলা হয়, খালেদা জিয়া হাত-পা নড়াচড়া করতে পারেন না। তাঁর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস কিছুটা বেশি। দিন দিন শরীর ড্যামেজ হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে পঙ্গুত্বের দিকে যাচ্ছেন। প্রপার ট্রিটমেন্ট দরকার। কিন্তু খালেদা জিয়ার অনুমতি ছাড়া নতুন কোনো মেডিসিন পুশ করা যাচ্ছে না।
জামিনের আপিল শুনানিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘খালেদা জিয়া সুস্থ অবস্থায় হেঁটে হেঁটে কারাগারে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি এখন এতই অসুস্থ যে পুরোপুরি পঙ্গু অবস্থায় চলে গেছেন, ছয় মাস পর তো তাঁর লাশ বের হবে। ওপরে আল্লাহ আছেন আর আপনারা এখানে আছেন, আর কাউকে বলার জায়গা নেই। আমরা বারবার জামিনের জন্য আসছি এ কারণেই যে তিনি ৭৫ বছরের একজন নারী, ২২ মাস যাবৎ জেলে আছেন। মানবিক কারণে তাঁর জামিন চাই।’
বেলা ১১টার দিকে আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে এজলাস থেকে নামেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। বিরতির পর ১১টা ৩৫ মিনিটে আবার এজলাসে ওঠেন বিচারপতিরা। খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আবার শুনানি শুরু করেন। শুনানি শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি শুরু করেন। তারপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী খুরশিদ আলম শুনানি করেন। দুপুর ১টায় শুনানি শেষ হয়। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আদেশ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সগীর হোসেন লিয়ন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, রাশেদা আলীম ঐশীসহ অর্ধশত আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলমসহ অর্ধশত আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন।