আন্তর্জাতিক আদালতের আজ যে বিচার হবে

মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহ’ত্যা নিয়ে নেদারল্যান্ডের হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুনানি শুরু হবে আজ।মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এ শুনানি চলবে আগামী তিনদিন। আর এই শুনানিতে অংশ নিতে হেগে অবস্থান করছেন মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
রোহিঙ্গা মুসলিম গণহ’ত্যা ইস্যুতে চলতি বছরের নভেম্বরে মায়ানমারের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জোট ওআইসির সমর্থনে গাম্বিয়ার ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হ’ত্যা, এবং তাদের আবাসন ধ্বংস করেছে মায়ানমার। পুরো রায় পেতে দীর্ঘ সময় লাগলেও মায়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী রায়ের আবেদন জানিয়েছে বাদী গাম্বিয়া। আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানিতে গাম্বিয়ার পক্ষে লড়বেন ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত আইনমন্ত্রী আবুবাকর তামবাদাউ।
আবুবাকর বলেন, ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের খতম করার জন্য সেনাবাহিনী নৃশংসতা শুরু করে। এর ফলে বাধ্য হয়ে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এদের কাছ থেকে নৃশংসতার যে কাহিনী বিশ্ব শুনেছে তা নিশ্চিত গণহ’ত্যার শামিল।রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের জন্য যাতে বিচারকরা কার্যকর পদক্ষেপ নেন। আর এজন্য আদালতকে প্রমাণ সংরক্ষণ করতে বলবেন তিনি।
এদিকে, বিচারিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ নেপথ্যে সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।বিচার পর্যবেক্ষণে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নেদারল্যান্ডস গেছে। তথ্য প্রমাণাদি এবং জনমত গঠন করে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
বিচারে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী রায় পাওয়া গেলে মায়ানমার যদি তা কার্যকরে গড়িমসি করে, সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দায়িত্ব নেবে।
ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, ১৪ সদস্যের বিচারক প্যানেলের সামনে সু চি ঠিক কী বলবেন, এ নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। তবে সময় যতো গড়াচ্ছে ততোই তার অবস্থান পরিষ্কার হচ্ছে । কারণ আগামী বছর মায়ানমারে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সু চি তার কৌশল ঠিক করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে সু চি সেনাদের পক্ষেই ওকালতি করবেন বলেই ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে মায়ানমারের সংবাদ মাধ্যমগুলো।
অন্যদিকে, মায়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সমর্থনকারী মানবাধিকার সংগঠনগুলো। পাশাপাশি রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেখানে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি দলের পাশাপাশি সরকার সমর্থকরা বিক্ষোভ করবে।
রোহিঙ্গাদের ওপর মায়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নির্যাতনকে আগেই জাতিগত নিধন বলে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। এ ইস্যুতে বাংলাদেশ ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর কথা বললেও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ সব পর্ষদে সে চেষ্টা আপাত দৃষ্টিতে সফল হয়নি।