ওই ভবনে ‘বয়ফ্রেন্ড’ সৈকতের সঙ্গে প্রবেশ করে রুম্পা: ডিবি

রাজধানীর বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের এক যুবককে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার আটককৃত ওই যুবকের নাম আবদুর রহমান সৈকত। তিনি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর সাবেক ছাত্র। পুলিশ বলছে, আবদুর রহমান সৈকত রুম্পার ছেলেবন্ধু ছিলেন।
এদিকে মৃত্যুর দিন কথিত প্রেমিক সৈকতের সঙ্গে সিদ্ধেশ্বরীর ওই ভবনটিতে রুবাইয়াত শারমিন রুম্পাকে ঢুকতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে সৈকতের সঙ্গে রুম্পার ওই ভবনে প্রবেশ করার দৃশ্য পেয়েছে ডিবি। ওইদিন রাত সোয়া ১০টায় তার মরদেহ পাওয়া যায় ভবনটির নিচে। ডিবি জানিয়েছে, এখন বিষয়টি আত্মহত্যা না হত্যা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘ওই ভবনে রুম্পা তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে প্রবেশ করার বিষয়টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ কারণে সৈকত নামের ওই যুবককে আটক করে আনা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাদানুবাদের এক পর্যায়ে তিনি দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে পড়তে পারেন। তবে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, দেখে মেনে হয়েছে রুম্পা ওপর থেকে পড়ে মারা গেছে। ওপর থেকে পড়ে মারা যাওয়ার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না- সেটি নিশ্চিত হতে তার শরীরর থেকে আলামত সংগ্রহ করেছি।’
এদিকে শনিবার সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে ৬৪/২ নম্বর বাড়ির সামনে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর একটি টিম।
শনিবার সকালে তারা সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং মামলার আলামত জব্দ করেন। তদন্ত প্রথমিক পর্যায়ে আছে বলেও জানান পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা।
পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি কি সুইসাইড (আত্মহত্যা) করেছেন না হোমিসাইডাল (হত্যার শিকার) হয়েছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে কাজ করছি। দ্রুত এ রহস্য উম্মোচিত হবে বলেও জানান তিনি।
গত বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/২ নম্বর বাড়ির সামনে রুম্পার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনার পরপরই পুলিশ, সিআইডি, ডিবি ও র্যাবের সদস্যরা আলামত সংগ্রহ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, মৃত্যুর আগে ধর্ষিত হয়েছিলেন। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী মেরুদণ্ড, বাম হাতের কনুই ও ডান পায়ের গোড়ালি ভাঙা। মাথা, নাক, মুখে জখম এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। বুকের ডান দিকে ক্ষত চিহ্নও ছিল।
রুম্পার বাবা মো. রুককুন উদ্দিন হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত। মা নাহিদা আক্তার পারুল গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের রুম্পা সবার বড়।
রুম্পা ২০১৪ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০১৬ সালে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।
রুম্পা স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর ছোট ভাই আশরাফুল আলম রাজধানীর ঢাকার ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত।
রাজধানী ঢাকার শান্তিবাগে একটি ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গে থেকে পড়াশোনা করতেন রুম্পা ও তার ছোট ভাই। পড়াশোনার পাশাপাশি রুম্পা টিউশনি করাতেন।