১২৬ কেন্দ্রেই প্রথম হয়েছেন খোকন

Jun 14, 2023 / 02:54pm
১২৬ কেন্দ্রেই প্রথম হয়েছেন খোকন

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন খোকন সেরনিয়াবাত। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১২৬ কেন্দ্রের সবকটিতেই প্রথম হয়েছেন তিনি। কেবল প্রথমই নয়, তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখার ফয়জুল করীমের চেয়ে অনেক বেশি ভোট পেয়েছেন। নিজের ওয়ার্ড ২৪ নম্বরেও নৌকার চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়েছেন ফয়জুল।

একই ঘটনা ঘটেছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের ক্ষেত্রে। নিজের ওয়ার্ড ২১ নম্বরে নৌকা এবং হাতপাখার চেয়ে পেয়েছেন কম ভোট। সিটিতে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৬টি। তবে মেয়র পদের চেয়ে কাউন্সিলর পদে ভোট নিয়ে বেশি আগ্রহ ছিল ভোটারদের।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন খোকন সেরনিয়াবাত। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১২৬ কেন্দ্রের সবকটিতেই প্রথম হয়েছেন তিনি। কেবল প্রথমই নয়, তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখার ফয়জুল করীমের চেয়ে অনেক বেশি ভোট পেয়েছেন।

নিজের ওয়ার্ড ২৪ নম্বরেও নৌকার চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়েছেন ফয়জুল। একই ঘটনা ঘটেছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের ক্ষেত্রে। নিজের ওয়ার্ড ২১ নম্বরে নৌকা এবং হাতপাখার চেয়ে পেয়েছেন কম ভোট। সিটিতে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৬টি। তবে মেয়র পদের চেয়ে কাউন্সিলর পদে ভোট নিয়ে বেশি আগ্রহ ছিল ভোটারদের।

বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিজয়ী এবং বিজিত প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান এতটাই বেশি যে, এখানে আসলে ভোটের বিশ্লেষণ করে কোনো লাভ নেই। তাছাড়া ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি যেখানে নির্বাচনে নেই সেখানে ফলাফল এমন হওয়াই স্বাভাবিক। বিএনপি নির্বাচনে থাকলে হয়তো হিসাবটা অন্যরকম হতো।’

নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. লস্কর নূরুল হক বলেন, ‘বরিশালের মানুষ একটা পরিবর্তন চাইছিল। সেই সঙ্গে চাইছিল উন্নয়ন। খোকন সেরনিয়াবাতের জন্য তাই একটা গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়। যার প্রতিফলন এই বিজয়। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, বিএনপির লোকজনও এবার নৌকায় ভোট দিয়েছে।’

তবে ফলাফল ঘোষণার প্রায় ২০ ঘণ্টা পরও নতুন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে শুভেচ্ছা জানাতে যায়নি হাসানাত আব্দুল্লাহ অনুসারী আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কেউ। সবাই যেখানে তার বাসায় গিয়ে জানাচ্ছে শুভেচ্ছা সেখানে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন মহানগরের সভাপতি-সম্পাদক। নির্বাচনি অফিসে গিয়েও তার সঙ্গে দেখা করেনি এই গ্রুপের কোনো নেতা।

হাসানাত পক্ষের কেউ না গেলেও সোমবার রাত থেকেই শুভেচ্ছায় ভাসছেন নির্বাচিত নয়া মেয়র। স্থানীয় রাজনীতিতে হাসানাতবিরোধী হিসাবে পরিচিত প্রায় সবাই যাচ্ছেন তার কাছে। খোকনও দেখা করেছেন ১৪ দলের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিমের সঙ্গে।

এদিকে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ১৮ কাউন্সিলর প্রার্থীর ৯ জন জয় পেয়েছেন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা বহিষ্কৃত রুপন পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৯৯ ভোট। বিজয়ী কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৯ জন মেয়র সাদিকের অনুসারী। ৭ জন খোকন সেরনিয়াবাতের। জামায়াতের ৪ জন নির্বাচন করলেও জয়ী হয়েছেন একজন। এছাড়া ২ জন আছেন তারা কোন পক্ষের তা এখনো নিশ্চিত নয়।

সোমবার নির্বাচন শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সবাই বুঝে ফেলে যে, বিশাল ব্যবধানে জিততে চলেছে নৌকা। এর পরপরই আওয়ামী লীগের উল্লসিত নেতাকর্মীদের ঢল নামে প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের আলেকান্দার বাসায়। অনেকে ছুটে যান সদর রোডে নৌকার প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে। নগরজুড়ে শুরু হয় ঢোল-বাদ্য নিয়ে আনন্দ উল্লাস, মিষ্টি বিতরণ। রাত সোয়া ৯টায় ঘোষিত চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৫৫ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছে নৌকা।

এর পরপরই তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, সংসদ-সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, কেন্দ্রীয় নেতা বলরাম পোদ্দার ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুভাষ হালদারসহ অন্য নেতারা। রাত থেকে শুরু হওয়া এই শুভেচ্ছা জ্ঞাপন চলছে এখনো। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এভাবে অভিনন্দন জানালেও খোকনের কাছে যাননি হাসানাত অনুসারী কেউ।

সোমবার রাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে খোকনকে অভিনন্দন জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন মহানগর সভাপতি জেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র সাদিক। বরিশালে থাকলেও খোকনের কাছে যাননি জাহাঙ্গীর। নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, ‘তারা বোধহয় লজ্জা পেয়েছে।

নৌকা হারানোর সব রকম চেষ্টাই তো তারা করেছে গোপনে। তারপরও যখন হারাতে পারেনি। এ কারণে হয়তো লজ্জায় পড়ে অভিনন্দন জানাতে পারছে না।’ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তাৎক্ষণিক শুভেচ্ছা জানিয়েছি আমরা। তাছাড়া তাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিসিসি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ায় ১৯ জনকে আজীবন বহিষ্কার করেছিল বিএনপি। সোমবার ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পর দেখা যায় এদের মধ্যে ৯ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

এরা হলেন ৩নং ওয়ার্ডে হাবিবুর রহমান ফারুক, ৮নং ওয়ার্ডে সেলিম হাওলাদার, ৯নং ওয়ার্ডে সৈয়দ হুমায়ুন কবির, ১৮নং ওয়ার্ডে জিয়াউল হক মাসুম, ২৪নং ওয়ার্ডে ফিরোজ আহম্মেদ, ২৮নং ওয়ার্ডে হুমায়ুন কবির এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সেলিনা বেগম, রাশিদা পারভিন ও মজিদা বোরহান। মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র কামালের পুত্র রুপন বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে পেয়েছেন ৮০ হাজার কম ভোট।

জামায়াতের ৪ জন এবার কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২৭নং ওয়ার্ডের মনিরুজ্জামান ছাড়া বাকি ৩ জন জয় পাননি। নির্বাচনে মেয়র সাদিকপন্থি ১৯ জন কাউন্সিলর জয়ী হয়েছেন। এরা হলেন ২নং ওয়ার্ডে আরিফুর রহমান মুন্না, ৪নং ওয়ার্ডে সৈয়দ আবিদুর রহমান, ৫ নম্বরে কেফায়েত হোসেন রনি, ৬ নম্বরে খান মো. জামাল হোসেন,

৭ নম্বরে অ্যাড. রফিকুল ইসলাম খোকন, ১১ নম্বরে মজিবর রহমান, ১২ নম্বরে আনোয়ার হোসেন রয়েল, ১৩ নম্বরে মেহেদী পারভেজ খান, ১৪ নম্বরে শফিকুল ইসলাম পলাশ, ১৭ নম্বরে গাজী আক্তারুজ্জামান হিরু, ১৯ নম্বরে নঈমুল ইসলাম খান লিটু, ২১ নম্বরে শেখ সাঈয়েদ আহম্মেদ মান্না, ২৯ নম্বরে ইমরান মোল্লা ও ৩০ নম্বরে খাইরুল শাহিন।

এছাড়া সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের ৫টিতে জিতেছে সাদিকপন্থি মহিলা কাউন্সিলররা। কাউন্সিলর তালিকায় নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী রয়েছে ৯ জন।

এরা হলেন ১০ নম্বরে জয়নাল আবেদীন, ১৬ নম্বরে শাহিন সিকদার, ২০ নম্বরে জিয়াউর রহমান বিপ্লব, ২৩ নম্বরে এনামুল হক বাহার, ২২ নম্বরে আনিছুর রহমান দুলাল, ২৫ নম্বরে সুলতান মাহমুদ এবং ২৬ নম্বরে হুমায়ুন কবির। সংরক্ষিত আসনের যে দুজন খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী তারা হলেন কহিনুর বেগম ও নূর নেহার বেগম। নির্বাচিত বাকি ২ কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষের বলে চিহ্নিত নন।