একজন কিষান মিলছে দেড় মণ ধানের দামে!

May 3, 2023 / 02:34pm
একজন কিষান মিলছে দেড় মণ ধানের দামে!

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় ধানকাটা শ্রমিকের চড়া বাজারদরের প্রেক্ষাপটে ধান কাটতে ভূমিকা রাখছে আধুনিক যন্ত্র। ধান কাটা শ্রমিক সংকটে বর্তমানে প্রায় দেড় মণ ধানের দামে মিলছে একজন ধানকাটা কিষান। তবে দুই সপ্তাহ আগেও দুই মণ ধানের দামের সমপরিমাণ ছিল ওই কিষানের প্রতিদিনের মজুরি।

আজ বুধবার (০৩ মে) সংশ্লিষ্টরা জানান, ধান কাটা কিষানের দাম জনপ্রতি দিনে এক হাজার থেকে ১২ শ টাকা। এর সঙ্গে দিতে হয় দুই বেলা খাবার। তবু এই কিষানের চাহিদা কমছে না। এ ক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি অফিসের রিপার মেশিন ও কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন ধান কেটে কৃষকের বাড়ি উঠিয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে বলে কৃষকরা জানান।

কলাতলা ইউনিয়নের শৈলদাহ গ্রামের আল আমীন, আক্কাছ আলীসহ কৃষকরা জানান, তারা ধানকাটা শ্রমিক না পেয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিস জানতে পেরে তাদের এলাকায় রিপার মেশিন ও কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিনে ধান কেটে বাড়ি উঠিয়ে দেয়। এ জন্য তারা কৃষি অফিসকে ধন্যবাদ জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চিতলমারীর দুর্গাপুর মোড়ে (মঠের কাছে) প্রতিদিন ভোরে দৈনিক কিষানদাতা মানুষ বিকিকিনির হাট বসে। চিতলমারীর বিভিন্ন গ্রামের পাশাপাশি প্রতিবেশী উপজেলা নাজিরপুর, কচুয়ার দেপাড়া, বাগেরহাট সদর উপজেলাসহ অন্যান্য এলাকা থেকে এখানে কিষানরা আসেন। সাধারণ কিষানের তুলনায় ধানকাটা কিষানের দাম তিন গুণ বেশি।

দুর্গাপুর গ্রামের গৃহস্থ নাহিদা ইয়াসমিন জানান, সম্প্রতি তার বাড়ির কাজের জন্য একজন কিষানকে দিনে চার শ টাকা দরে নিয়েছিলেন। অপরদিকে ধানকাটা কিষানের দাম দিনে জনপ্রতি এক হাজার থেকে ১২ শ টাকাসহ দুই বেলা খাবার।

চিতলমারীর আড়ুয়াবর্ণি গ্রামের রসুল খাঁর ছেলে সেকেন্দার আলী খাঁ ও কলিগাতী গ্রামের সামছু শেখের ছেলে রবিউল শেখসহ অন্যান্য গ্রামের কিষানরা জানান, প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত তারা ধান কাটা ও ধান বয়ে বাড়ি নেওয়ার কাজ করছেন।

এ জন্য জনপ্রতি তাদের পারিশ্রমিক প্রতিদিন এক হাজার টাকা এবং সঙ্গে দুই বেলা খাবার দিচ্ছেন গৃহস্থ। তবে দিনমজুর কেনাবেচার হাটে কোনো সিন্ডিকেট নেই। প্রত্যেক কিষান নিজে গৃহস্থের সঙ্গে দরদাম করে কাজে যায় বলে তারা জানান।

দুর্গাপুর গ্রামের মলয় বোস, মো. একরাম, শ্যামপাড়া গ্রামের পরিমল বৈরাগী, বিভাষ মণ্ডলসহ কৃষকরা জানান, মাঠের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। ধানের বাজারদর দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ ধান আট শ থেকে নয় শ ত্রিশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণের দাম ছিল পাঁচ শ থেকে ছয় শ টাকা। প্রতিদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, অল্পস্বল্প বৃষ্টি হয়।

চিতলমারী উপজেলা কৃষি অফিস ও উপজেলা কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছায় কৃষকের ধান কাটতে সহায়তা করতে দেখা গেছে। মাঠে থাকা বাকি ধান ঝড়-বৃষ্টি আসার আগেই কৃষকের বাড়ি দ্রুত তুলে দিতে সংশ্লিষ্টরা সহায়তা করলে ভালো হয়।

কালের কণ্ঠকে চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সিফাত-আল-মারুফ জানান, ধানকাটা শ্রমিক সংকট থাকলেও মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় কৃষকের ধান কেটে বাড়ি তুলে দেওয়া হচ্ছে। কৃষি অফিসের সবার সার্বক্ষণিক সহায়তায় এই উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ৬৯টি রিপার মেশিন ও একটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটার কাজ চলছে।

ইতোমধ্যে প্রায় ৮২ ভাগ ধান কৃষকের বাড়িতে উঠেছে। কোনো কৃষকের সহায়তা লাগলে কৃষি অফিসে জানালে মাঠ থেকে ধান বাড়িতে উঠিয়ে দিতে দ্রুত সাহায্য করা হবে। তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে চিতলমারীতে ১২ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৪ হাজার ৭১৪ মেট্রিক টন এবং গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৮৩ হাজার ৮৬০ মেট্রিক টন।