কোনো শিক্ষার্থী নেই মাদ্রাসায়, ১৩ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়মিত বেতন তুলছেন

Jun 2, 2022 / 02:52pm
কোনো শিক্ষার্থী নেই মাদ্রাসায়, ১৩ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়মিত বেতন তুলছেন

‌পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সূর্যমণি ইউনিয়নের পূর্ব ইন্দ্রকূল ফিরোজা কামাল বালিকা দাখিল মাদ্রাসা নামে একটি নামসর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০০৪ সালে এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোনো শিক্ষার্থী।

মোট ১৩ শিক্ষক-কর্মচারী গত ১৮ বছর ধরে নিয়মিত বেতনভাতা তুলছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একাডেমিক সুপারভাইজারকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে নামসর্বস্ব এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় আবদুল মোতালেব নামে এক ব্যক্তি। তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠার পর থেকে। ১৩ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে সভাপতি তার পুত্রবধূ মাহফুজা বেগমকে সুপার পদে এবং দুই ছেলের মধ্যে খাইরুল ইসলামকে পিয়ন অন্যজন ছিদ্দিকুর রহমানকে নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীরা সভাপতির নিকটাত্মীয় বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার ১১টার দিকে সরেজমিন মাদ্রাসাটি পরিদর্শনে যাওয়ার পর একজন শিক্ষার্থীরও দেখা মেলেনি। মোট ৫ শিক্ষকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পরে বাড়ি থেকে খবর পেয়ে সুপার ও সভাপতি এসে বলেন, এখানে ২৫০ শিক্ষার্থী আছে। একটু আগেই মাদ্রাসা ছুটি দেওয়া হয়েছে।

সুপারের কক্ষে আসবাব বলতে একটি টেবিল এবং চারটি চেয়ার। নেই কোনো ফাইল কেবিনেট কিংবা আলমিরা। মাদ্রাসার কোনো শ্রেণিকক্ষে পাওয়া যায়নি ব্ল্যাকবোর্ড। শিক্ষকদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানের ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতি মাসে ২ লাখ ৮ হাজার টাকা বেতন তুলছেন নিয়মিত।

শিক্ষক হাজিরা খাতায় দেখা যায়, আইরিন বেগম নামের একজন শিক্ষক ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর সর্বশেষ উপস্থিতি স্বাক্ষর করেছেন। এর পর আর গত ৭ মাস শিক্ষক হাজিরায় স্বাক্ষর নেই তার। অথচ বেতন উত্তোলন করেছেন প্রতি মাসে।

টেলিফোন করা হলে আইরিন বেগম দম্ভোক্তি করে বলেন, মাদ্রাসায় একটি খুঁটি থাকলেও আমি নিয়মিত বেতন পাব।

মাদ্রাসার সুপার মাহফুজা বেগম বলেন, আগে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। ২০০৯ সালের পর শিক্ষকদের মাঝে ঝামেলা হওয়ায় আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীরা এখানে লেখাপড়া করতে আসছে না। দূরের কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করে এখান থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়ে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখেছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক সমাজসেবক বলেন, নিয়মিত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একাডেমিক সুপারভাইজারকে মাসোহারা দিয়ে নামসর্বস্ব এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বেতনভাতা তুলছেন।

অবশ্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক ও একাডেমিক সুপারভাইজার মো. নুরনবী মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, শিগগিরই মাদ্রাসাটি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।