প্রতিবন্ধী বাবু ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএমএস পাঠিয়ে পেলেন ঘর’

প্রকাশিত: সেপ্টে ৪, ২০২১ / ১১:৩৮অপরাহ্ণ
প্রতিবন্ধী বাবু ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএমএস পাঠিয়ে পেলেন ঘর’

নিজের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোন নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে জমিসহ পাকা ঘর পেলেন মাগুরা সদর উপজেলার রামনগরের প্রতিবন্ধী কলেজ ছাত্র বাবু মিয়া (২২)।

মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে গত এপ্রিলে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছিলেন মাগুরা সদর উপজেলার রামনগরের প্রতিবন্ধী কলেজছাত্র বাবু মিয়া।

এসএমএসটি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দপ্তর থেকে মাগুরা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে যোগাযোগ করে বাবু মিয়ার খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে একটি ঘর করার নির্দেশ দেন। বাবু মিয়াকে মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় দুই শতক সরকারি খাস জমিতে দুই কক্ষের একটি সেমি পাকা ঘর করে আজ শনিবার বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম আজ শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় উপস্থিত থেকে প্রতিবন্ধী বাবু মিয়ার কাছে বাড়ি ও জমির দলিল বুঝিয়ে দেন। বাবু মিয়া মাগুরা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র।

প্রতিবন্ধী কলেজছাত্র বাবু মিয়া বলেন, ‘ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর মাকে নিয়ে মাগুরা সদরের রামনগরে নানা বাড়িতে থেকেছি। আমার কোনো জায়গা জমি ছিল না। মাকে নিয়ে কোথায় যাব কোথায় থাকব।

এই চিন্তা থেকেই অনেক কষ্ট করে প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে গত এপ্রিল মাসে আমার দুরাবস্থা জানিয়ে একটি ঘর চেয়ে এসএসএস পাঠাই। আমার এসএসএসটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাগুরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই ঘর করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেন।

প্রতিবন্ধী বাবু মিয়া ঘর পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। আল্লাহ যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সুস্থ রাখেন। তার মতো অসহায় মানুষের পাশে সব সময় থাকবেন।

মা হাসনাহেনা বেগম বলেন, ‘চার সন্তানের মধ্যে বাবু সবার ছোট। ছোট বেলা থেকে বাবু প্রতিবন্ধী। ঠিক মতো কথা বলতে পারে না। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে চার সন্তান নিয়ে আমি অনেক কষ্ট করেছি। আমার বাবার বাড়িতে ছোট একটি ঘরে সেখানে সবাইকে নিয়ে বাস করা যায় না। অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে আমি সন্তানদের বড় করেছি।

কিন্তু তাদের কোনো থাকার জায়াগা দিতে পারিনি। শত ব্যস্ততার মাঝেও প্রধানমন্ত্রী আমার বাবুর পাঠানো এসএমএসটি পড়ে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। এর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহ যেন তাকে দীর্ঘজীবী করেন। তিনি আজীবন যেন আমাদের মতো অসহায় মানুষের পাশে থাকতে পারেন’।

জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, প্রতিবন্ধী বাবু মিয়া তার নিজের অসহায়ত্বের কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএমএস করেন। বাবু তার এসএমএসে লিখেছিলেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী বাবু মিয়া, মাকে নিয়ে ছেলেবেলা থেকে নানা বাড়িতে জীবনযাপন করছি।

আমাদের কোনো জায়গা-জমি নেই। মাসহ আমাদের পাঁচ সদ্যসের সংসার। নানা বাড়িতে থাকি। আমার একটি ঘর দরকার। প্রধানমন্ত্রী আমার একটি ঘর করে দিলে চির কৃতজ্ঞ থাকব।’

জেলা প্রশাসক আরো জানান, এসএমএসটি পড়ে প্রধানমন্ত্রী আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বাবু মিয়ার খোঁজ-খবর নিলে অসহায়ত্বের সত্যতা মেলে।

পরে হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় হাজরাপুর পুরাতন বাজার মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কের পাশে দুই শতক জমিতে পাকা ঘর করে নির্মাণ করা হয়। জেলা প্রাশাসনের পক্ষ থেকে যা বাবু মিয়াকে বুঝিয়ে দেওয়া হলো।

ঘর প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসিন কবির, হাজরাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কবির হোসেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন