উদ্ধার করা হলো ‘জাপানি নাগরিকের দুই শিশু কন্যাকে’

প্রকাশিত: আগ ২২, ২০২১ / ০৯:৩০অপরাহ্ণ
উদ্ধার করা হলো ‘জাপানি নাগরিকের দুই শিশু কন্যাকে’

জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোর দুই শিশু কন্যাকে উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার বিকালে ওই জাপানি নারীর দুই কন্যা সন্তানকে উদ্ধার করা হয়।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক রবিবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে কখন কোথা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

গত বৃহস্পতিবার আইনজীবীর মাধ্যমে এই দুই শিশুকে ফিরে পেতে জাপানি ওই মা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনে তিনি বাংলাদেশি-আমেরিকান স্বামীর কাছ থেকে সন্তানদের নিজের জিম্মায় পাওয়ার নির্দেশনা চান।

সেদিন জাপানি ওই নারীর রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত স্বামী শরীফ ইমরানের তত্ত্বাবধানে থাকা তার ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়েকে হাজির করার নির্দেশ দেন।

রিটে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এরিকোর দুই সন্তানসহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক শরীফ ইমরান ও তার বোনকে (ফুফু) সশরীরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে এক মাসের জন্য শরীফ ইমরান ও দুই শিশুর বাংলাদেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। আদালত রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেন এবং ৩১ আগস্ট তাদের আদালতে উপস্থিত নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দেন।

এর আগে ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন।

১২ বছরের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হচ্ছেন জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) এবং সানিয়া হেনা (৭)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিলেন।

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে।

পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে বাচ্চাদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন।

কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যন করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার বাচ্চাদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু ইমরান শ্রীলংকা থেকে এরিকোকে ফিরে যেতে বলেন।

এরিকো বাংলাদেশে কভিড পরীক্ষা করান এবং এর ফলাফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু ইমরান কভিডের ফলাফল অবিশ্বাস করে এরিকোর সঙ্গে সন্তানদের সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান।

অবশেষে ২৭ জুলাই মোবাইল সংযোগ বন্ধ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় এরিকোকে তার মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয় এবং একই অবস্থায় তাদের গাড়িতে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় এরিকো সন্তানদের নিজের জিম্মায় চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন।

সেই জাপানি মায়ের দুই শিশু কন্যাকে উদ্ধার

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন