গাড়ি ভাড়া নিয়ে বিক্রি করে বনে গেছেন কোটিপতি

প্রকাশিত: আগ ৯, ২০২১ / ১১:১৪অপরাহ্ণ
গাড়ি ভাড়া নিয়ে বিক্রি করে বনে গেছেন কোটিপতি

আবদুল কাইয়ুম ছোটন ওরফে ইসতিয়াক বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। দুর্নীতির দায়ে চাকরি হারিয়ে করোনা মহামারিকে পুঁজি করে অর্থ কামানোর ধান্দায় নামেন তিনি। গাজীপুরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে গার্মেন্ট কারখানা খোলেন।

কারখানার মেশিনপত্র আনেন ভাড়ায়। ২০০ গার্মেন্টকর্মী নিয়োগ গিয়ে পুরোদস্তুর গার্মেন্টের মালিক বনে যান। আর আলিশান অফিস বানিয়ে এবার আটঘাট বেঁধে নেমে পড়েন প্রতারণায়।

ছোটন প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য ভাড়ায় গাড়ি নেওয়ার বিজ্ঞাপন দেন। করোনার সময় বসে থাকা গাড়ির মালিকরাও তাতে সাড়া দেন।

আর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য গাড়ির ভাড়া বাবদ মালিকদের প্রত্যেককে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকার অগ্রিম চেক দিয়ে রাখেন। দু-তিন মাস পর সেই গাড়িও নেই, ছোটনের অফিসও নেই। এরপর প্রতারণার শিকার গাড়ি মালিকরা ছোটেন পুলিশের কাছে।

অভিযোগ পেয়ে পুলিশের পাশাপাশি সিআইডিও তদন্ত শুরু করে। অবশেষে গত রবিবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ঢাকা, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর ও রংপুর থেকে প্রতারকদলের হোতা ছোটনসহ সাতজনকে গ্রে’প্তা’র করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা হলেন আলী মিজি ওরফে আবদুল হাই, নাজমুল হাসান, সানি রহমান, সাজরাতুল ইয়াকিন রানা, আলমগীর শেখ ও সেলিম।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডি জানতে পারে যে এভাবে প্রতারণা করে আনা ২২টি গাড়ির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকায় সেগুলো বিক্রি করে দেন ছোটন। বিক্রি করা প্রাইভেট কার, জিপ, মাইক্রোবাস ও পিকআপ মিলিয়ে সাতটি গাড়ি উদ্ধার করেছে সিআইডি।

সিআইডি সদর দপ্তরে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। যে সাতটি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলোর মালিকরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একজন স্মৃতি আক্তার বলেন, ‘লকডাউনের কারণে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। গাড়িটা গ্যারেজে পড়ে ছিল।

এ কারণে রেন্ট-এ-কারে গাড়িটি দেই। মান্থলি ২৮ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এক বছরের চুক্তি হয় তার সঙ্গে। এক মাস যাওয়ার পর গাড়িও পাই না; ছোটনকেও পাওয়া যায়নি।’

আরেকজন গাড়ি মালিকের নাম মোহাম্মদ ইবনে জজবি। তিনি বলেন, ‘মাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়ার চুক্তি হয় ছোটনের সঙ্গে। এক পর্যায়ে তাঁকে ফোনে না পেয়ে তাঁর স্ত্রীকে ফোন দেই। তাঁর স্ত্রী জানান যে ছোটন লাপাত্তা হয়ে গেছেন। পরে পুলিশে অভিযোগ করি।’

অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায় যে চক্রের হোতা আব্দুল কাইয়ুম ছোটন কক্সবাজারে এবং তাঁর চক্রের অন্য সদস্যরা গাজীপুরের গাছা থানা এলাকায় একটি চারতলা বাড়ির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অবস্থিত এ কে ফ্যাশনস পোশাক কারখানার নামে মোট ২২টি গাড়ি ভাড়া করেন।

পরে মালিকদের না জানিয়ে গাড়িগুলো তাঁরা বিভিন্ন ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন। গাড়ি বিক্রির তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারকচক্রটি আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে গাড়ির মালিকরা কাইয়ুম ও তাঁর চক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা করেন।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরো জানান, শুরুতে চ’ক্র’টির দুজনকে চিহ্নিত করে মানিকগঞ্জ পৌরসভার শহীদ রফিক সড়ক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে প্রধান সহযোগী সানিকে দিনাজপুর এবং রানাকে রংপুর সদর থেকে গ্রে’প্তা’র করা হয়।

পরে আলমগীর শেখ নামের আরেকজনকে উত্তরা থেকে এবং সেলিমকে গাজীপুর থেকে গ্রে’প্তা’র করা হয়। গ্রে’প্তা’রকৃতদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গত রবিবার বিকেলে চ’ক্রে’র হোতা আব্দুল কাইয়ুমকে খুলনার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রে’প্তা’র করা হয়।

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন